নিজস্ব প্রতিবেদক:
চীনের দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে চেয়েছিল, আগ্রহী ছিলো ভারতও। তবে প্রথমে চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই ট্রায়াল হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
চীনের যে দুটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে যেতে পেরেছে, তার একটি সিনোভ্যাক৷ বাংলাদেশে বড় আকারের পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে। গত ১৯ জুলাই এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য নৈতিক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এরপর আইসিডিডিআরবিতে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল। এমনকি ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূত এই ট্রায়ালে টিকা গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চেয়েছিলেন৷
ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে ভ্যাকসিন আসবে না উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করছি, আগামী বছরের মে-জুন নাগাদ সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। বাংলাদেশের বেক্সিমকো, বিকনসহ দেশি কোম্পানিগুলোও আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে যেসব দেশ কাজ করছে, সবার সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে। চীন যেহেতু সবার আগে প্রস্তাব করেছে, তাই তাদের ভ্যাকসিন সবার আগে ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। চীনের এই কোম্পানি যতো দ্রুত শুরু করবে, আমরা তখনই ট্রায়াল শুরু করবো।’
‘বাংলাদেশে চায়নার সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে চায়। ১ লাখ ইউনিট ফ্রি দেবে চায়না। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন পেতে অগ্রাধিকার দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় আসবেন, তারা চায়নার সিনোভ্যাকের ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন৷’
তিনি বলেন, ‘যে ভ্যাকসিন আগে আসবে, সে ভ্যাকসিন আগে নেওয়া হবে। ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক যতো পাওয়া যাবে, তার ওপর সংখ্যা নির্ধারিত হবে। ভারত অনুমতি চাইলে তাদেরও দেওয়া হবে।’
‘ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত যারা স্বেচ্ছায় আসবেন, সিনোভ্যাকের করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে আগ্রহী হবেন, তাদেরকেই অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে দেশের বাজারে ভ্যাকসিন আসবে না।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনাদের কাছ থেকেও আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে কাজ করা তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের যে নাগরিকরা রয়েছেন, অ্যাম্বাসির লোকেরা আছেন- তাদের ওপরেও এই কোম্পানি ট্রায়াল করবে। আজকে এই বিষয়ে ডিটেইলড আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন তাদের অফিসিয়ালি জানিয়ে দিচ্ছি যে, আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই ট্রায়াল কার্যক্রম হবে। আজকে চীনের রাষ্ট্রদূতের (লি জিমিং) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এই সিদ্ধান্তগুলো জানিয়েছি।’
‘রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার সরকার ও কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজ যতো দ্রুত শুরু করা যায়, সেটা তারা করবেন। তারা আগে এটাও বলেছিলেন, এক লাখ ইউনিট ভ্যাকসিন ফ্রি দেবেন। ট্রায়াল কার্যক্রমে যে ব্যয় হবে, সেটাও তারা বহন করবেন। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে ট্রায়ালের সুযোগ দেবো। তবে যখন বিক্রি করবেন তখন যেন প্রথম দিকে বাংলাদেশের নামটা থাকে। বাংলাদেশ যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পায়, এই কথাটির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই কথার ওপর জোর দিয়েছেন।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় থাকবো। পাশাপাশি চেষ্টা করবো, যেন আমাদের সংক্রমণের হারটা কমে আসে। ভ্যাকসিন আসতে একটু সময় লাগবে। আমরা যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা করলাম, ডিসেম্বর/জানুয়ারির আগে কোনো ভ্যাকসিন আসবে না।’
সবাই মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা হচ্ছেন ৫০ শতাংশ, আর ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ২৮ শতাংশ। আমরা এই মৃত্যু রোধ করতে চাচ্ছি। কোভিডকে প্রতিহত করতে চাচ্ছি, পৃথিবী চাচ্ছে বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ভ্যাকসিন। আমরা জানি, পৃথিবীর প্রায় ১৪০টি দেশ ও কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। অনেকগুলো কোম্পানি আছে, যারা অনেক অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। ৫/৬টি কোস্পানি একেবারে থার্ড স্টেজে আছে।’
সান নিউজ/ এআর