স্পোর্টস ডেস্ক :
২২৯ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় কলকাতা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার সুনিল নারিন মাত্র ৩ রান করে অ্যানরিচ নর্টজের বলে বোল্ড হন। ৮ রানে প্রথম উইকেট হারানো দলকে এরপর কিছুটা পথ টেনে নিয়েছেন নীতিশ রানা আর শুভমান গিল। ৪১ বলে তারা গড়েন ৬৪ রানের জুটি। এই জুটি ভাঙে গিল লেগস্পিনার অমিত মিশ্রর শিকার হলে। ২২ বলে ২৮ রান করেন গিল।
এমন পরিস্থিতিতে চার নম্বরেই নেমেছিলেন বিধ্বংসী আন্দ্রে রাসেল। দশম ওভারে কাগিসো রাবাদাকে বুলেট গতির এক চার আর বড় এক ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি আশাও দেখিয়েছিলেন কলকাতার সমর্থকদের।কিন্তু দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি।। রাবাদার ওভারের চতুর্থ বলটি ছক্কা হাঁকিয়ে পঞ্চম বলেই টপএজ হয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন রাসেল, তাতেই শেষ ৮ বলে ১৩ রানের ছোট্ট ইনিংসটা।
এরপর মাথার ওপর কেবল রানের চাপ বেড়েছে কলকাতার। সেই চাপেই পেসার হর্ষল প্যাটেলের করা ইনিংসের ১৩তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় দলটি। ৩৫ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় নীতিশ রানা ফেরেন ৫৮ করে। পরের বলে অধিনায়ক দিনেশ কার্তিকও ৬ রানে সাজঘরের পথ ধরেন।কলকাতার হার তখন কেবল সময়ের ব্যাপার। কে জানতো, পরে এমন নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে! ১২২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে ৩০ বলেই ৭৮ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন ইয়ন মরগ্যান আর ত্রিপাথি।
১৮তম ওভারে রাবাদাকে টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে মরগ্যান কাঁপিয়ে দেন দিল্লি শিবির। ওই ওভারে ত্রিপাথির এক বাউন্ডারিসহ ২৩ রান তুলে কলকাতা। শেষ দুই ওভারে তখন দরকার ৩১ রান। এক ওভারেই ২৩ রান তোলা দলের জন্য কাজটাকে অসম্ভব মনে হচ্ছিল না।কিন্তু পরের ওভারে দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচটা আবার দিল্লির দিকে ঘুরিয়ে দেন অ্যানরিচ নর্টজে। প্রথম দুই বলে দুটি সিঙ্গেলস দেন, তৃতীয় বলে তাকে তুলে মারতে গিয়ে লং লেগে হেটমায়ারের ক্যাচ হন মরগ্যান। ১৮ বলে ১ চার আর ৫ ছক্কায় ৪৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান ফেরার পরই ছিটকে পড়ে কলকাতা।
১৯তম ওভারে দলটি তুলতে পারে মাত্র ৫ রান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৬। ১৬ বলে ৩৬ রান করা ত্রিপাথি স্টয়নিসের করা ওই শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান। কলকাতার ইনিংস থামে ৮ উইকেটে ২১০ রানে।এর আগে কলকাতার বোলারদের ইচ্ছেমতো পিটিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৮ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় দিল্লি ক্যাপিট্যালস। যা কিনা চলতি আইপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।মাথার ওপর ২২৮ রান। জিততে হলে করতে হবে ২২৯। এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আবার ১২২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট নেই। ৩৯ বলে আরও করতে হবে ১০৭ রান। এই ম্যাচ জেতার আশা কে করবে?
অথচ এমন এক ম্যাচেও জেতার খুব কাছে চলে এসেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। শারজাহতে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে যাচ্ছিল বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের দল। যে গল্পের শেষটা করতে পারল না তারা।দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের পর জয়ের খুব কাছে এসে হেরে গেছে কলকাতা। তাদের ১৮ রানে হারিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। এই জয়ে আবার পয়েন্ট তালিকারও শীর্ষে চড়ে বসেছে শ্রেয়াস আয়ারের দল।দিনের প্রথম ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। বিরাট কোহলির দলকে বেশিক্ষণ সেই জায়গায় থাকতে দিল না দিল্লি। ৪ ম্যাচে দুই দলেরই এখন সমান ৩ জয়। কিন্তু রানরেটে পিছিয়ে থাকায় বিরাট কোহলির ব্যাঙ্গালুরু নেমে গেছে দুইয়ে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও পৃথ্বি শ্ব। প্রথম ছয় ওভারে ৫৭ রান পেয়ে যায় দিল্লি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ২টি করে চার ও ছয়ের মারে ১৬ বলে ২৬ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার ধাওয়ান।দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারকে অপরপ্রান্তে রেখে ঝড় তোলেন তরুণ ওপেনার পৃথ্বি। মাত্র ৪১ বলে ৭৪ রান যোগ করেন আইয়ার ও পৃথ্বি। ইনিংসের ১৩তম ওভারে দলীয় সংগ্রহ ১২৯ রানে পৌঁছে দিয়ে আউট হন পৃথ্বি। আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটিতে ৪১ বলে ৪টি করে চার-ছয়ের মারে ৬৬ রান করেন ২০ বছর বয়সী এ ওপেনার।
পরে পৃথ্বির সঙ্গে শুরু করা তাণ্ডবটি রিশাভ পান্তকে নিয়ে সাইক্লোনে রূপ দেন দিল্লি অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। বোলার হোক নারিন কিংবা কামিন্স, অথবা রাসেল কিংবা মাভি; সবাইকে সমানভাবে চার-ছয় হাঁকাতে থাকেন আইয়ার ও পান্ত।দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৭২ রান, তাও মাত্র ৩১ বলে। দলীয় সংগ্রহ ২০০ পার করে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পান্ত। আউট হওয়ার আগে ৫ চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মারে ১৭ বলে করেন ৩৮ রান। ততক্ষণে মাত্র ২৬ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন আইয়ার।১৬তম ওভারে অর্ধশত করে ১৯ ওভারের মধ্যেই ৮৮ পৌঁছে যান দিল্লি অধিনায়ক। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি হয়তো পেয়েই যাবেন। কিন্তু শেষ ওভারে একটি বলও খেলার সুযোগ পাননি আইয়ার। যার ফলে ৩৮ বলে ৭ চার ও ৬ ছয়ের ৮৮ রানে অপরাজিত থাকতে হয় তাকে।
সান নিউজ/পিডিকে