ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত! নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার কার্যত ‘নম্বর টু’ যিনি, সেই অমিত শাহ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি কোভিড পজিটিভ। ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
গতকাল রোববার (২ আগস্ট) বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটে অমিতের এই টুইটে নড়ে বসে গোটা ভারত। আর রাত সাড়ে ১১টায় কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা টুইটারে জানিয়ে দেন, কোভিড পজিটিভ তিনিও। ভাল আছেন, কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
গত বুধবার (২৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ। আগামী বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণকাজের সূচনা হওয়ার কথা। আর অমিতের করোনা-আক্রান্ত হওয়ার অর্থই হল, ওই দিন তিনি তো অযোধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারবেনই না, উল্টে খোদ প্রধানমন্ত্রীরই যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশ্নের মুখে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও। কারণ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এতোদিন পরামর্শ দিয়ে এসেছে যে, করোনা-আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা গত তিন-চার দিনে এসেছেন, তাদের প্রত্যেকের নিভৃতবাসে থাকা উচিৎ।
অমিত টুইটারে লেখেন, ‘আমি করোনা-আক্রান্ত। চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছি।’ তার পরেই তিনি ভর্তি হন দিল্লির উপকণ্ঠে গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালে। তার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সুশীলা কাটারিয়ার নেতৃত্বে চিকিৎসকের একটি দল। যারা দীর্ঘদিনের (ক্রনিক) অসুখের শিকার, তাদের গোড়া থেকেই সাবধানে থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। অমিত দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ফলে তার শারীরিক অবস্থার দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি লাইপোমা অপারেশন হয় তার। ভোটের আগে অমিত প্রায় বিশ কেজি ওজনও কমিয়েছিলেন।
তিনি করোনা-আক্রান্ত জানানোর সঙ্গেই টুইটে আরও একটি বার্তায় অমিত অনুরোধ করেন যে, ‘গত কয়েকদিনে যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন, তারা যেন পক্ষকাল নিভৃতবাস করেন।’
অমিত গত কয়েকদিনে যাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। অমিতের পরামর্শ মানলে ঝুঁকি না-নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও নিভৃতবাসে যাওয়া উচিৎ। কারণ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনিও ছিলেন।
তবে কি নরেন্দ্র মোদীও কোয়রান্টিনে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নই রাত থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে।
করোনার একের পর এক বড় ধাক্কা চলছে বিজেপি শিবিরে। শনিবার (১ আগস্ট) উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী কমল রানি বরুণ কোভিড-আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রোববার উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহ এবং উত্তরপ্রদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী মহেন্দ্র সিংহের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। মন্ত্রী কমল রানির মৃত্যুতে এ দিনের অযোধ্যা যাত্রা বাতিল করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অযোধ্যায় রামলালার অস্থায়ী মন্দিরের সহকারী পুরোহিত আগেই করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানকার ১৬ জন পুলিশকর্মীও করোনা আক্রান্ত। অথচ বুধবার রামের জন্মক্ষণ অভিজিৎ লগ্নে মোদীর হাতেই মন্দিরের ভূমিপুজো হওয়ার কথা!
বিশেষজ্ঞদের মতে, অমিত যেমন নিজের করোনা সংক্রমণের কথা না-লুকিয়ে প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, তেমনই মোদী যদি নিয়ম মেনে নিভৃতবাসে যান, সে ক্ষেত্রে দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। আর না-গেলে প্রশ্ন তুলবেন বিরোধীরা। ফলে রীতিমতো জোড়া অস্বস্তির মুখে বিজেপি। সরকারের যুক্তি, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পারস্পরিক দূরত্ব ও সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল।
অমিতের আরোগ্য কামনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। কিন্তু মোদী রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন। বিকেলে অমিতের টুইটের পরে দেশের প্রায় সব নেতা টুইট করে ফেললেও মোদী নীরবই। দিল্লিতে করোনা-নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমে কাজ করেছিলেন অমিত। মূলত তার হস্তক্ষেপের পরেই দিল্লিতে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াও লাদাখ পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন তিনি। দিন দশেক আগে গিয়েছেন নবতিপর নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে। ওই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে নালিশের বহর নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা দু’দিন আগেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আলোচনা করতে হাজির হয়েছিলেন অমিতের বাসভবনে। তাদের অনেকেই অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে নিভৃতবাসে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
করোনা-আবহে রামমন্দিরের ভূমিপুজো করা উচিৎ কি না, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। গোটা দেশে মোদী সরকার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, অযোধ্যার ভূমিপুজো কী ভাবে ছাড় পায়? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘দেশের করোনা পরিস্থিতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংক্রমণ ও উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর মৃত্যু স্পষ্ট বোঝাচ্ছে পরিস্থিতি ঠিক নেই।’’ তবে কাল প্রস্তুতি দেখতে যোগী অযোধ্যা যাবেন বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
সুস্থ হয়ে এ দিনই মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন বলিউডের অমিত, অমিতাভ বচ্চন। সেই দিনেই করোনা সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হলেন রাজনীতির অমিত। সব মিলিয়ে বিজেপির মন্দির কর্মসূচির সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন করোনা!
সান নিউজ/ এআর