ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে পিছনে ফেলে রাশিয়া ঘোষণা করল, তারাই প্রথম করোনার টিকা তৈরি করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) এই ঘোষণা দিয়েছেন। ওই টিকাটির নাম রাখা হয়েছে ‘স্পুটনিক ভি’।
রুশ প্রেসিডেন্টের এই দাবিকে ঘিরে গোটা দুনিয়া জুড়েই আলোচনা-সমালোচনার চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, করোনার টিকা তৈরির দৌড়ে ছিল আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশ। রুশ প্রেসিডেন্টের দাবি সত্যি হলে, শেষ মুহূর্তে মস্কোই যে বাজিমাত করলো তা বলছেন অনেকেই। প্রথম টিকাটি দেওয়া হয়েছে পুতিনের মেয়েকে।আগামীকাল বুধবার (১২ আগস্ট) থেকে শুরু হতে চলেছে ওই টিকার ফেজ থ্রি পর্যায়ের ট্রায়াল।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়া যে দ্রুত টিকা তৈরি করে ফেলবে, তা কিছুদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন রুশ বিজ্ঞানীরা। তাদের তৈরি টিকা মানব শরীরে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে সাফল্য পেয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। আগস্টে সাধারণের জন্য ওই টিকা তৈরি হয়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার টিকা গবেষণা নিয়ে উৎসুক ছিল গোটা বিশ্বই। এর মধ্যেই মঙ্গলবার টেলিভিশন বার্তায় রুশ প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, ‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে রাশিয়াই প্রথম টিকা তৈরি করেছে।’
ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওই টিকা ‘দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা’ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলেও দাবি করেছেন পুতিন।
রাশিয়ার গামালেয়া ইনস্টিটিউট এবং রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে ওই টিকা। রুশ সংবাদ সংস্থা ‘স্পুটনিক’ জানাচ্ছে, গত ১৮ জুন ৩৮ জনের ওপর টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। তাদের সকলের মধ্যেই করোনাকে প্রতিরোধের ক্ষমতা জন্মায় বলেও রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি। এই টিকা গবেষণায় অর্থ ঢেলেছে রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)। তার প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ অবশ্য মঙ্গলবার জানিয়েছেন, টিকার ফেজ থ্রি ট্রায়াল শুরু হবে বুধবার থেকে।
দিমিত্রিয়েভের দাবি, টিকাটি গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০টি দেশ ওই টিকার মোট ১০০ কোটি ডোজের চাহিদার কথাও তাদের জানিয়েছে। তিনি বলছেন, রাশিয়া বিভিন্ন বৈদেশিক অংশীদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাঁচটি দেশে প্রতি বছরে ওই টিকার মোট ৫০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতেও প্রস্তুত। সেপ্টেম্বর থেকেই রাশিয়ায় ওই টিকা তৈরি করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
করোনায় ব্যতিব্যস্ত গোটা দুনিয়াই এখন টিকার অপেক্ষায়। পুতিন বলেছেন, ‘আমি আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে আমরা ওই টিকার বিপুল উৎপাদন করতে পারবো এবং তা খুবই প্রয়োজনীয়।’ টিকা আবিষ্কারকে ‘গোটা দুনিয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন পুতিন।
রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কো জানিয়েছেন, গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং বিন্নোফার্ম, এই দুটি জায়গায় করোনার টিকা উৎপাদন করা হবে।
মুরাস্কো আরও জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দু’ধাপে টিকাটি নিতে হবে। তার মতে, এর ফলে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা শরীরে দু’বছর পর্যন্ত থাকবে।
রুশ সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক জানাচ্ছে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ওই টিকা জনসাধারণকে দেওয়া হতে পারে। ওই টিকা উৎপাদনে আরডিআইএফ বিদেশে বিনিয়োগ করবে বলেও জানিয়েছেন রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
গোটা দুনিয়া জুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা। তার আঁচ পড়েছে রাশিয়াতেও। সংক্রমণের সংখ্যার নিরিখে এখন সারা বিশ্বে চতুর্থ স্থানে পুতিনের দেশ। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আট লাখ ৯০ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৯০০ জনের। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরেই করোনার টিকা তৈরির গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রুশ বিজ্ঞানীরা। অবশেষে সাফল্য মিলেছে বলে মস্কোর পক্ষে দাবি করা হয়েছে।
পুতিনের টিকা আবিষ্কারের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে তা নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। আমেরিকা দাবি করেছে, ওই ভ্যাক্সিনের এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই শেষ হয়নি। মার্কিন সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ লেখা হয়েছে, ‘পরীক্ষার দিকে না তাকিয়ে, রাজনৈতিক এবং প্রচারের উদ্দেশ্য পূরণেই সাধারণ মানুষকে টিকা দেওয়ার দৌড়ে সামিল হয়েছে রাশিয়া।’
সংবাদপত্রটি আরও দাবি করেছে, নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা তৈরির জন্য সমস্ত ধাপ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলার পরামর্শ রাশিয়াকে আগেই দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে হু-এর নির্দেশিকা মানা হয়নি। যদিও, মার্কিন সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আরডিআইএফ-এর প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
সান নিউজ/ বিএম/ এআর
