আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
চীন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) ওপারে সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন বাড়ালে ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েন বাড়াবে।
আজ (২৭ মে) প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ নিয়ে চীনা সেনা আপত্তি তুলেছে, তা-ও চালিয়ে যাওয়া হবে।
ভারত-চীন সীমান্তের তিনটি সেক্টরই এখন উত্তপ্ত। গত ৫ মে থেকেই পশ্চিম ভাগে বা ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাত চলছে। ‘ফিঙ্গার থ্রি’ ও ‘ফিঙ্গার ফোর’-এর মধ্যে রাস্তা তৈরির কাজে চীন প্রথম আপত্তি তোলে। একই সঙ্গে গালওয়ান ভ্যালির সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার কাজেও চীনের আপত্তি।
৫ মে রাতে পূর্ব লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে চীন ভারতীয় সেনার নজরদারি বাহিনীকে বাধা দেয়। তার পর থেকেই ওই দু’টি এলাকায় দু’দেশের সেনা পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পূর্ব ভাগে বা ইস্টার্ন সেক্টরের উত্তর সিকিমেও এ মাসের শুরুতে দুই সেনাবাহিনীর সংঘাত বেধেছে। সাধারণত সেন্ট্রাল সেক্টরের উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশের অংশ শান্ত থাকে। কিন্তু সেখানেও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চীন প্রায় হাজার দশেক সেনা মোতায়েন করেছে। প্যানগং লেক থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের গারি গুনশা বিমান ঘাঁটিতে ব্যাপক হারে নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে হাজির বেশ কিছু যুদ্ধবিমানও।
গোয়েন্দা সংস্থা ‘ডিট্রেসফা' সূত্রে গারি গুনসা বিমানবন্দরের দুইটি ছবি সামনে এসেছে। একটি ৬ এপ্রিল তোলা। অন্যটি গত ২১ মে-র। দু'টি ছবিতেই দেখা গেছে, ব্যাপক হারে নির্মাণ কাজ চলছে সেখানে। দৃশ্যত সেখানে যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার রাখার ঘাঁটি হচ্ছে।
আরও একটি ছবি সামনে এসেছে। এতে কাছ থেকে বিমানবন্দরটিকে দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান রাস্তায় চারটি যুদ্ধবিমান পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে। সেগুলো চীনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স’-এর জে-১১ বা জে-১৬ যুদ্ধবিমান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
জে-১১ বা জে-১৬ হল রাশিয়ান সুখোই ২৭-এর উন্নত সংস্করণ। এর সঙ্গে ভারতের সুখোই ৩০ এমকেআই-এর মিল রয়েছে।
চীনের এই গারি গুনসা বিমানবন্দরের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৪ হাজার ২২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই বন্দরটি সেনা ও যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রকৃত সীমান্তরেখার খুব কাছে অবস্থিত এই বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এতটা উঁচু থেকে সেখানে কেবল সীমিত যুদ্ধ সামগ্রী ও জ্বালানি বহন করা সম্ভব।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথও হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, চীন যদি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে আরও বেশি সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করে, ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা-যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করবে। তবে চীন যে প্রস্তুতিটা ভালভাবেই নিচ্ছে তা গত কাল ভারত থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবেই বুঝা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছে , ‘‘সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সে জন্য সামগ্রিক প্রশিক্ষণ জরুরি।’’ চিনের ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষা’ এবং ‘দেশের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য’ যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে সেনাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
চীনা সেনার একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার সময়ে এই মন্তব্য করেছেন চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান শি। কূটনীতিকদের মতে, করোনা নিয়ে মার্কিন দোষারোপ, তাইওয়ান পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের বাতাবরণে সেনাদেরকে বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি। ক’দিন আগে চীনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, করোনা সংক্রমণের দায় চাপিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে আমেরিকা।
তবে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের বাতাবরণে শি’র বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।
সান নিউজ/ বি.এম.