সারাদেশ

পানিতে দাঁড়িয়ে ৬২ গ্রামের ঈদের নামাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খুলনার উপকূলীয় কয়রার মানুষেরা যেভাবে ঈদের নামাজ আদায় করলো এই নিয়ম হয়তো জানা নেই কারও। আসলে এইটা কোন নিয়ম নয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ৬২ গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করলো পানির ভিতর দাঁড়িয়ে।

২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনার উপকূলীয় কয়রার বাঁধ ভেসে আইলার আঘাতে। এরপর ১১ বছরেও তা নির্মিত হয়নি। এবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে বাঁধের অবশিষ্ট অংশও। আইলার আঘাতে এবার প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।

তাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের ওপর পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই কয়রাবাসী ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে তারা আবার বাঁধ মেরামতের কাজে নেমে পড়েন।

বাঁধের কাজে নিয়োজিত মানুষদের জন্য সকালে সেমাই ও দুপুরে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এর কিছুও ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

কয়রা উপজেলার ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল গফ্ফার ঢালি বলেন, বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনীহার কারণেই আজ কয়রার মানুষকে লোনা পানিতে ডুবতে হল। জোড়াতালির কাজ কোনও কাজেই আসেনি। কিন্তু অর্থের অপচয় হয়েছে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আন্দোলন ধুলিষ্যাৎ করে দিলো আম্পান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে এখন কয়রার মানুষকে এত ভোগান্তি পোহাতে হত না।

কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবির বলেন, নোনা জলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছে। আজ ঈদের ভাঙ্গা বাঁধের পাশে অনুষ্ঠিত হবার পর সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবলীলায় নদী ও সমুদ্রের নোনা জলে বিলীন হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। বাঁধ ভেঙে অস্বাস্থ্যকর দূষিত নোনা পানির তলে অবস্থান করছে উপজেলাটির ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬২টি গ্রাম।

তিনি আরো বলেন, আম্পানের ফলে উপজেলার ১ লাখ ৮৪ হাজারেরও অধিক মানুষ হয়েছে গৃহহীন। নোনা পানিতে ডুবে গেছে সাড়ে ৪ হেক্টর চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। নষ্ট হওয়া ১০-১১ মেট্রিক টন চিংড়ি ও সাদা মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নেই খাওয়া ও থাকার জায়গা, নোনা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সুন্দরবন কোল ঘেঁষা উপজেলার মানুষেরা।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন। আম্পানের আঘাতে সেই যুদ্ধ আবার নতুনভাবে শুরু করতে হল।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রাবাসীর বেড়িবাঁধ নিয়ে আন্দোলন ২৫ মে থেকে নতুন মাত্রায় যুক্ত হবে। এখন পর্যন্ত টেকসই বাঁধ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব কিছু ঠিকাদার দিয়ে করা কাজের মান ছিল নিম্মমানের। ফলে আম্পানের আঘাতে সেসব স্থানই আগে ভেঙেছে আর এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এখানে ভালো ফসল হয়, মাছ চাষ হয়। এখন কয়রার মানুষ বাঁধ চায়। ত্রাণের দরকার হবে না। প্রয়োজন টেকসই বাঁধ।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহ বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এখন আম্পানে বিধ্বস্ত হয়ে আরও মুখ থুবড়ে পড়েছে। কয়রার ৪টি ইউনিয়রে সমগ্র এলাকা লোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কয়রার মানুষ এখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা ঈদের দিন বাঁধের ওপরই নামাজ আদায় করে সেমাই খেয়ে মেরামতে নেমে পড়েছেন। দুপুরে তাদের জন্য খিচুড়ির আয়োজন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ২০ মে আম্পানের আঘাতে কয়রার বেড়িবাঁধের ২৪ পয়েন্ট ভেঙে আবারও লোনা পানিতে সয়লাব হয়।

সান নিউজ/ আরএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ, গ্রেফতার ৩

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া ফেরিঘ...

মুন্সীগঞ্জে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

মো. নাজির হোসেন, (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: মহান শহীদ দিবস ও আন...

রক্তদানের মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতা

মাহিদুল হোসেন সানি: রাজধানীর কামর...

শহীদ মিনারে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২১ শে ফেব্রুয়ারি পালন ও ভাষা শহীদদের শ্রদ্...

অবৈধ পথে ভারতে যাবার সময় স্বামী-স্ত্রী আটক

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি:

৬০২ ফিলিস্তিনি মুক্তি আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় সপ্তম দফায় আজ আর...

মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা, নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে মোটরসাইকেল নিয়ন...

রাতে বাড়তে পারে তাপমাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে , সারা...

চরমপন্থি দলের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ৩

জেলা প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকূপায় চরমপন্থি গ্রুপের মধ্যে গো...

সীমান্তে নির্মাণে যৌথ পরিদর্শন সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৪ দিনব্যাপী (১৭-২০ ফেব্রুয়ারি) বিজিবি-বিএস...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা