নিজস্ব প্রতিবেদক:
তালা (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরার তালায় বেসরকারি সংস্থা পরিত্রাণের কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসের বিরুদ্ধে গৃহবধূ ঋতুপর্ণা দাসকে (১৯) বিয়ের চারদিনের মাথায় অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় একমাস পরেও ওই নববধূকে উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত স্বজনেরা। মামলার আসামিদের হুমকিতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
ঋতুপর্ণা দাস যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা এলাকার ভদ্রদাসের মেয়ে ও তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের লক্ষণ দাসের ছেলে লিটন দাসের স্ত্রী। গত ৫ আগস্ট তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর গত ৯ আগস্ট সকালে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার পুটিয়াখালি গ্রাম থেকে ঋতুপর্ণাকে অপহরণ করে নিয়ে যান কয়েকজন যুবক। ওই গ্রামে স্বামীর ভগ্নিপতি গোপাল দাসের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের জেরে ঋতুপর্ণা বিয়ে করলেও তার ভাই এই বিয়ের বিরোধিতা করে আসছিলেন। গত ৮ আগস্ট সকালে লিটন তার স্ত্রী ঋতুপর্ণাকে নিয়ে তার ভগ্নিপতির বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে স্ত্রীকে রেখে বিকালে চাকরির সুবাদে বাগেরহাটে কর্মস্থলে চলে যান। ৯ আগস্ট সকালে বেসরকারি সংস্থা পরিত্রাণের প্রোগ্রাম অফিসার উজ্জ্বল দাস ও পার্শ্ববর্তী বড়েঙ্গা গ্রামের ভদ্র দাসের ছেলে ননী গোপাল দাসের নেতৃত্বে সঞ্জয় দাস, শংকর দাস, তালার গোনালী এলাকার শশীবর দাস, পুটিয়াখালি এলাকার প্রবীর দাস, চন্দ্র শেখর দাস, উদয় দাস ও সুজিত দাস গৃহবধূ ঋতুপর্ণাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান।
এ সময় স্বামীকে রেখে তাদের সঙ্গে যেতে রাজি না হওয়ায় পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসের লোকজন গৃহবধূ ঋতুপর্ণাকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তারা ঋতুপর্ণাকে নিয়ে চলে যান। পাশাপাশি লিটন দাসের ভগ্নিপতির বাসা থেকে স্বর্ণের দুল, রুলি, চেইনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যান। এ সময় স্থানীয়রা অপহরণে বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় লিটন দাস বাদী হয়ে গৃহবধূর নিজ এলাকা যশোরের কেশবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ ও পাটকেলঘাটা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১০০ ধারায় অপহরণের মামলা করেন লিটন দাস। মামলার পর থেকে এনজিও পরিত্রাণের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসসহ তার লোকজন লিটন দাসকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছেন।
লিটন দাস বলেন, ‘জোরপূর্বক আমার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছেন পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী। স্ত্রীকে ফিরে পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ ও মামলা করেছি। তবে অভিযোগ ও মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত উজ্জ্বল দাস ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমি যদি মামলা তুলে না নেই, তাহলে তারা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলা ও আমার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দেবেন বলে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।’
স্ত্রীকে ফেরত পেতে ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন লিটন।
পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাস তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে পরিত্রাণ পরিচালক মিলন দাস বলেন, অভিযুক্ত উজ্জ্বল দাস যদি পরিত্রাণ এনজিও’র নাম ও পদবি ব্যবহার করে এ ঘটনাটি ঘটান এবং এ বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে উজ্জ্বল দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অপহরণের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের সম্পর্কিত বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
সান নিউজ/ এআর