নিজস্ব প্রতিনিধি : সরকারি এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মাকে ‘অপদস্ত’ করার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন : নোবিপ্রবিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ৬
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এ ঘটনায় দুপুর তিনটা থেকে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে সরকারি ওই কর্মকর্তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে বগুড়ার জজ আদালতের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মেয়ে পড়াশোনা করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকে।
আরও পড়ুন : বেগমগঞ্জে ১১ পাসপোর্ট দালাল গ্রেফতার
গত সোমবার (২০ মার্চ) ওই কর্মকর্তার মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও নিজেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতেই কর্মকর্তার মেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়।
এই সময় সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা সরকারি...। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো .... হতে।’
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবক গ্রেফতার
ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের ৪ জন সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এই নিয়ে ওই কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন।
সে সময় সেই কর্মকর্তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হুমকি দিয়ে জেল দেওয়ার কথা বলেন। এই সময় দুই অভিভাবককে ওই কর্মকর্তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ২ শিক্ষার্থী নিহত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘কর্মকর্তার মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়।
এই সময় কর্মকর্তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেওয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকে পা ধরে ক্ষমা চান। তাদের কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এ বিষয়ে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সাথে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
আরও পড়ুন : ১০০ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেলো উখিয়ায়
যতটুকু জেনেছি সোমবার কর্মকর্তার মেয়ের ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিলো। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি।
এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এই কাজটি সম্পূর্ণ করেন। এই সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সাথে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদের কেউ বাধ্য করেনি।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে উন্নয়ন তুলে ধরুন
এ ঘটনায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তারা সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করেন।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম একই সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন ।
সান নিউজ/এইচএন