গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গ্রাম বাজে ফুলছড়ি। প্রত্যন্ত চরে অবস্থান গ্রামটির। শুকনো মৌসুমে বালুর রাজ্য আর বর্ষায় চারদিকে থই থই পানি। নদীভাঙনে বিলীন হয় আশপাশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে এ চরের মানুষ। এখানকার এক লড়াকু নারী ফরিদা বেগম।
আরও পড়ুন : গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় ৩শত বিঘা জমি
১৪ বছর বয়সে বাল্যবিয়ের শিকার এ নারী অভাবের সঙ্গে লড়াই করে খুঁজে নিয়েছে পরিশ্রম ও সম্মানের জীবন। ২০২১ সালে এলজিইডির সেক্টর ভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল নারীদের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার অর্জন করে ফরিদা বেগম।
পারিবারিকভাবেই ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় ফরিদার। তিন সন্তান জন্মের পর ভেঙে যায় সংসার। সস্তানদের নিয়ে ফিরে আসতে হয় মা-বাবার বাড়ীতে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ফরিদা বাবার বোঝা হয়ে থাকতে চাননি। এখানে সেখানে কাজের আশায় ছোটাছুটি করে তিনি।
দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়ে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনি। এরই মধ্যে মানুষের বাসায় কাজ করা শুরু করে। কয়েক দিন পরেই হঠাৎ সংবাদ পান এলজিইডির অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে দুস্থ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের।
আরও পড়ুন : দায়ের কোপে প্রাণ গেল বাবার
প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দলের (এলসিএস) সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান ফরিদা। পরে গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ জীবনমান উন্নয়ন ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে। কাজ করার মজুরির টাকা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার চালানোর পাশাপাশি শুরু করেন সঞ্চয়।
সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে বাড়িতে করে হাঁস-মুরগি ও গাভি পালন। তারপর থেকে ফরিদাকে পেছন ফিরে আর তাকাতে হয়নি। নিজের সাফল্য নিয়ে ফরিদা বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তিন সন্তান রেখে স্বামী ছেড়ে চলে যায়। তিন সন্তান নিয়ে কি করব ভাবতেই পারছিলাম না। একসময় হালই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এলজিইডির প্রভাতী প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক লোক নেবে। কাজ করার আগ্রহ জানাই তাদের। এরপর শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাই। প্রভাতী প্রকল্পের হাত ধরেই হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগল পালন করে। খামারের গরু-ছাগল বিক্রয় করে ফসলি জমি ক্রয চাষ শুরু করেন। হয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের নামে বসতবাড়ি ভিটেসহ ফসলি জমি ক্রয় করেছে তিনি।
আরও পড়ুন : ১৭ বছর পালিয়ে ছিলেন ফাঁসির আসামি
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এলজিইডির সেক্টর ভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল নারীদের মধ্যে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার অর্জন করেন ফরিদা বেগম।
জানা যায়, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাড) ইতালি অনুদানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে প্রান্তিক গোষ্ঠী অবহেলিত নারী নিয়ে কাজ শুরু করে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরবেষ্টিত দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে এলজিইডির অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
এলসিএস মনিটরিং জীবিকা কর্মকর্তা খন্দকার জাকির হোসেন বলেন, প্রভাতী প্রকল্পে কাজ করে ফরিদার মতো অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। অবহেলিত নারীরও কাজের দক্ষতা অর্জন করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু কাজের বিনিময়ে টাকা দেওয়া এমনটা নয়, তারা যাতে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এ রকম পরামর্শ সবসময় দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন : রিকশাচালক ও পথচারীদের মাঝে গোলাপ বিতরণ
গাইবান্ধা জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যেন ভবিষ্যতে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারে।
সান নিউজ/এইচএন