সান নিউজ ডেস্ক: ভোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে বিশ্বজুড়েই কাজের চাপ বেড়েছে নারীদের। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী। তাদের এক হাতে সামাল দিতে হচ্ছে কর্মক্ষেত্র অন্যদিকে বাড়ির কাজ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের করা এক জরিপে বলা হয়, অতিরিক্ত কাজের চাপ, চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টি, ক্যারিয়ারের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে।
বিশ্বের ১০টি দেশের পাঁচ হাজার নারীর ওপর এ জরিপ চালানো হয়। সেখানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫১ শতাংশ নারী এখন তাদের কর্মজীবন ও ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা নিয়ে কম আশাবাদী। অথচ মহামারীর আগে এমন অবস্থায় তারা ছিলেন না। জরিপে অংশ নেয়া ২৯ শতাংশ নারী বলছেন, তারা যেমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন, সে অনুযায়ী ক্যারিয়ারে উন্নতি হচ্ছে না। আর এজন্য মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিকেই দায়ী করছেন তারা।
জরিপে অংশ নেয়া খুব কমসংখ্যক নারীই বলেছেন যে তাদের মানসিক অবস্থা ভালো বা বেশ ভালো আছে। মাত্র ২২ শতাংশ নারী বলছেন, তাদের নিয়োগকর্তারা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনকে আলাদা রাখার জন্য এ দুটোর মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা টেনে দিয়েছেন।
ডেলয়েট মিডল ইস্টের পিপল অ্যান্ড পারপাস পার্টনার রানা ঘানদোর সালহাব বলেন, গত বছর প্রচুর নারী এক ধরনের ঝড়ের মধ্যে পড়েছিলেন। তাদের ওপর হঠাৎ করেই বেড়ে যায় কাজের চাপ ও দায়িত্ব। বাড়ির কাজ ও দাপ্তরিক কাজের মধ্যে যে সীমানা থাকে, সেটি এ সময় অনেকটা অদৃশ্য হয়ে পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নারীর ওপর মহামারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ সংকট বিদ্যমান বৈষম্য আরো প্রকট করেছে। পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে যে অর্জন হয়েছে, সেগুলোকেও মুছে ফেলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
৭৭ শতাংশ নারী বলেছেন, মহামারী শুরুর পর থেকে তাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনযাপনে। নারীদের এখন অনেক বেশি গৃহস্থালি ও পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
৫৯ শতাংশ নারী বলছেন, আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় এখন তাদের বাড়ির কাজে ব্যয় করতে হয়। ৩৫ শতাংশ জানিয়েছেন, সন্তানদের দেখাশোনার জন্য বেশি সময় দিতে হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনার জন্য আগের চেয়ে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ২৪ শতাংশ নারী।
জরিপ শেষে করা প্রতিবেদেন বলা হচ্ছে, দায়িত্বের এ বিশাল চাপ নারীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ারের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপরেও ভীষণ প্রভাব ফেলছে। এছাড়া মহামারীকালে কর্মক্ষেত্রগুলো থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা অর্থাৎ অনিশ্চয়তাও নারীদের মানসিক চাপের কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে ৫৭ শতাংশ নারী বলছেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে চান তারা। ২১ শতাংশ এ বছরের মধ্যেই চাকরি পরিবর্তন করতে চান। মূলত কর্মজীবনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারার কারণেই বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে চান তারা।
সান নিউজ/এমএম