নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বাজারে সব ধরনের পণ্যের বাড়তি দামে কোণঠাসা ক্রেতারা। এবার বাড়তি মুনাফা পেতে চালের বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছেন মিলাররা।
আরও পড়ুন: ভালুকায় রাস্তার ইট তুলে ফেলার অভিযোগ
মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে গরিবের মোটা চাল এবং মাঝারি ও সরু চালের দাম বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও দাম বাড়ছে হু হু করে।
এমন পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া মানুষকে এক কেজি মোটা চাল কিনতে ৫২-৫৪ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যেকোনো অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
এ দিন নওগাঁ ও দিনাজপুরে মিল পর্যায়ে বস্তা প্রতি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়, যা ৭ দিন আগেও ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয় ২৪০০ টাকায়, যা ৭ দিন আগে ছিল ২৩০০ টাকা। প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৩২০০ টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩১০০ টাকায়।
রাজধানীর কাওরানবাজারের আল্লাহ দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন রোজার মাস হওয়ায় মানুষ চাল একটু কম কেনে। বেচা-কেনা কম হয়। তাই দামও কম থাকে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে বিস্ফোরণ, নিহত বেড়ে ২
তবে এবার চিত্র উল্টো। রোজা ঘিরে মিলাররা কারসাজি করছে। মিল পর্যায়ে তারা বস্তা প্রতি ১০০-২০০ টাকা দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রি করছে। এতে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বাড়তি দামে কেনায় মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৭ দিন আগে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি।
বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা পাইকারিতে বিক্রি করছি ২৬০০ টাকা, যা ৭ দিন আগে ছিল ২৫০০ টাকা। এছাড়া মিনিকেট চালের বস্তা ৩৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায়ে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, তারচেয়ে কম দিচ্ছে। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হচ্ছে। তাই একটু সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মানুষকে দিচ্ছে। যে কারণে দাম তুলনামূলক বাড়ছে।
মালিবাগ কাঁচা বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দীদার হোসেন বলে, মিলাররা চাল নিয়ে আবারও কারসাজি করছে। ফলে পাইকারি পর্যায় থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোর্ট প্রাঙ্গণে কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা
তিনি জানান, খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা, যা ৭ দিন আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৬৭-৬৮ টাকা।
বাজারে চাল কিনতে আসা আলাউদ্দিন আরিফ জানান, রোজার বাজারে একটি মাত্র পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। এবার সেই পণ্যের দামও বাড়ানো হলো। এ দেশের ব্যবসায়ীরা রোজায় সব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করে।
তারা একটুও ভাবে না ভোক্তাকে জিম্মি করে অতি মুনাফা করলে পরকালে জবাব দিতে হবে। তাহলে তারা এমনভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করত না।
আরও পড়ুন: এমপি আবদুল হাই আর নেই
এ বিষয়ে যারা দেখবে, তারা শুধু মিডিয়ায় বড় বড় বক্তব্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কষ্টে থাকতে হয় ক্রেতাকে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চালের দাম কেন বেড়েছে, তা তদারকি করে বের করা হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।
সান নিউজ/এনজে