মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে বীজ আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কায় জমিতে রোপন করা বীজ তুলে ফেলেছেন কৃষকরা। এই বীজগুলো কাঁদা ও পানির নিচ থেকে তুলে তা আবার বাড়িতে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ আমদানির আহ্বান
মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে কৃষকের বিস্তীর্ণ আলু জমি। অনেক জমিতে এখনো পানিতে থৈ থৈ করছে। কৃষক সেচযন্ত্র (সোলার) ও থালা-বাসন দিয়ে তাদের তলিয়ে যাওয়া আলু জমিগুলো সেচার চেষ্টা করছেন।
কৃষকরা দাবি করছেন, তাদের নতুন আলু রোপণ করতে হবে। তাছাড়া এ জেলায় অন্য কোনো ফসল করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৬,২০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছেন কৃষকরা। বাকি জমি আবাদ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ২ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব জমিতে রোপন করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের আলু বীজ, যা এখন পানিতে তলিয়া আছে। যার প্রায় ৯৫% নষ্ট হয়ে যাবে বলে কৃষকরা ধারণা করছেন।
প্রতি হেক্টরে ২,৬৫০ কেজি বা ৬৬ মণের বেশি বীজ আলু লেগেছে। সে হিসাবে, ১৬,২০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার মণ বীজ আলু রোপন করা হয়েছে।
কৃষকদের হিসেব অনুযায়ী, হেক্টর প্রতি বীজ আলুতে খরচ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ বীজ আলুতে খরচ ২৩৬ কোটিরও বেশি খরচ হয়েছে, যা এখন পানির নিচে। বীজ ছাড়াও প্রতি হেক্টরে জমিতে এবার আলু আবাদে সার লেগেছে ১,৬০০ কেজি।
আরও পড়ুন: প্রথম ধাপের পরীক্ষা বাতিল চেয়ে মানববন্ধন
২২ টাকা কেজি সারের হেক্টরে খরচ ৩৫,২০০ টাকা। জমির জমা গড়ে প্রতি হেক্টর ৭০ হাজার টাকা। শ্রমিক মজুরী হেক্টরে ৩৭ হাজার টাকা আর অন্যান্য খরচ ১৫ হাজার টাকা।
অর্থাৎ হেক্টর প্রতি জমি জমা নিয়ে চাষ করতে চাষীদের খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২,৯৫০ টাকা। সে হিসেবে, একদিনে বৃষ্টিতে ১৬,২০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
গতকাল জমির আইলে দাঁড়িয়ে তলিয়ে যাওয়া জমি দেখছিলেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষক আবু মিয়া।
আরও পড়ুন: আজ আওয়ামী লীগের যৌথসভা
তিনি বলেন, এ বছর ৩ কানি (৪২০ শতাংশ) জমিতে আলু আবাদ করেছিলাম। এখন সব জমি পানির নিচে। সব বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
সরকার যদি আমাদের একটু সহায়তা করত, আমাদের যদি বীজ জোগাড় করে দিত, আমরা টাকা দিয়ে কিনে নিতাম তারপরও আমরা জমিতে আবার আলু চাষ করতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন যাবত শুনতেছিলাম ঘূর্ণিঝড় হইবো। কিন্তু আমাদের এলাকার সবাই আলু লাগাইতাছি, দেখাদেখি আমিও লাগাই ফেললাম। ভাবছিলাম কয়দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। এখন মনে হয় আর তেমন বৃষ্টি হইবো না। কিন্তু বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণে নিহত ৪
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বলই এলাকায় তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে বীজ আলু তুলে ফেলেছেন আলমগীর শেখ। তিনি বলেন, আলু লাগাইছিলাম, সব তলায় গেছে। ২ টা বাক্স (হল্যান্ড হতে আমদানিকৃত বীজ) লাগাইছিলাম, তাও তলায় গেল।
এখন খুব কষ্ট করে কাঁদা ও পানি থেকে আলু উঠায় ফেলতেছি, যদি আবার লাগানো যায়। টাকা পয়সা নাই, নতুন কইরা কিনমু। তাই কাঁদার মধ্যে থেকে আলু তুলে রাখতেছি। যদি না পচে, আবার লাগাবো।
সদর উপজেলার কৃষক সবুজ মিয়া তার জমি থেকে থালা দিয়ে পাশের ডোবায় পানি সেচে ফেলছিলেন। তিনি বলেন, নালা কেটে দিয়েছিলাম। এখন জমির পাশের ডোবাও ভরে গেছে। পানি যাওয়ার জায়গা নাই। তাই বাঁধ দিয়ে সেচে ডোবার মধ্যে পানি ফেলতেছি।
আরও পড়ুন: ঢালারচর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত
হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ৫০ কেজি আলুর বাক্স ৯,৩০০-৯,৪০০ টাকা ছিল। এখন সে বীজ ১৫,০০০ টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় বীজ পাব, কেমনে আবার আলু লাগাবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলায় মোট ১৬,২০০ হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হলেও মোট ১০ হাজার হেক্টর জমির আলু আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো পানির নিচে আছে।
বীজ সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন এখনো মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে বেশ কিছু আলু মজুদ আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাছাড়া হল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত বীজও আছে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত বীজ সংকট দেখা দেয় কিনা- এটা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে ক্ষতির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা চলছে।
বীজের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, বীজের দাম বাড়লে, আমরা তা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। আমারা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে জেল-জরিমানা করতেও পারছি না। প্রশাসনের যাদের এ ক্ষমতা আছে, তারা বিষয়টি দেখবে বলে আশা করছি।
সান নিউজ/এনজে