মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: অগ্রহায়ণের শেষ দিকে অসময়ের বৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিরা চরম উৎকন্ঠায় পড়েছেন। জমিতে পানি জমার আশঙ্কায় আইল কেটে দিতে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে সবজির দাম চড়া, অসহায় ক্রেতারা
তবুও কৃষকরা তাদের রোপিত আলুর বীজের ৭০ ভাগই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা এ পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করেছে এবং বাকি জমি আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অধিকাংশ জমি চাষ দিয়ে রেখেছেন কৃষক।
আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষক এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমিতে ইতিমধ্যে আলু রোপন করে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: বিষ দিয়ে মাছ নিধন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষী
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেকে জমি তৈরি করার পরেও বৃষ্টিপাত হয় কিনা সেই অপেক্ষায় আলু রোপন করেননি।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর রাত থেকে মুন্সীগঞ্জে অবিরাম বৃষ্টি ঝরে। সারাদিন বৃষ্টিতে সবই শেষ হয়েছে কৃষকদের। কিছু দিন আগে হয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় মিথিলি। সে সময় কৃষকদের অনেক জমিতে পানি জমে আলু বীজ নষ্ট হয়।
পরে কৃষকরা আবার যখন তাদের জমিগুলো পুনরায় আলু আবাদ করেছেন এবং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সে সময় এ বৃষ্টি যেন কৃষকের মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ।
আরও পড়ুন: ঢাকায় গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা
মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ি, সিরাজদীখান, গজারিয়া উপজেলার কৃষি জমি ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে বন্ধ রয়েছে আলু আবাদের কাজ। যে কৃষি বিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছিল, সেগুলো এখন শ্রমিকশূণ্য।
ফলে কৃষক নিজেই কোদাঁল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরছেন আইল কেটে পানি নামানোর নালা করার জন্য। বুধবার সন্ধার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আউটশাহি এলাকার বিলে আলু জমির আইল কেটে নালা তৈরি করছিলেন শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করার জন্য প্রস্তুত করছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রাখছি। এতো দিনে আলু রোপন করে ফেলতাম।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর থেকে বাসে আগুন ১৬২
কিন্তু কিছু দিন যাবৎ শুনছিলাম আবারও ঘূর্ণিঝড় হবে, তাই আলু রোপন করিনি। ঘূর্ণিঝড় না হলেও যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপন করতে পারবো না। যেটুকু লাগানো হয়েছে, সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা কেটে দিচ্ছি।
এ বছর সার, আলু বীজ, জমি-জমা সবকিছুর দাম বেশি। যে জমিগুলোতে আলু রোপন করিনি, সেগুলোতেও সার ছিটিয়ে রাখছি। এখন আলু লাগাতে না পারলে আমার সব লস হবে।
সিরাজদীখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক রহমান শেখ বলেন, আমি এবার ৫ কানি (৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আমার রোপণ করা বীজ আলু একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে এবং পুনরায় আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হবে।
আরও পড়ুন: তাপমাত্রা কমার আভাস
গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এ বছর মিথিলির আগে আড়াইকানী জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম।
কিন্তু মিথিলির সময় বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে লাগানো হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, মনে হয় সব পচেঁ যাবে। ক্ষতি হবে লাখ টাকা।
সদর উপজেলা চরকেওয়ার ইউনিয়নের কৃষক মো. নিরব আহমেদ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৩ কানি জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম এ সপ্তাহে। এখনো চারা উঠেনি। সবগুলোই নষ্ট হয়ে যাবে। আমারা ৩ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং
এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলার মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিকটন আলু। বাকি জমিগুলোতে আলু আবাদের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিথিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে আলু চাষ আরও বিলম্বিত হবে।
সান নিউজ/এনজে