নিজস্ব প্রতিবেদক:
গোপালগঞ্জ: এবারের বন্যা ও ভারি বর্ষণে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মৎস্য ও সবজিচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় মাছ ও সবজিতে প্রায় ৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য ও কৃষি অফিস।
মৎস্য ও সবজিচাষিরা জানান, তারা সর্বস্ব দিয়ে মাছচাষ ও ঘেরপাড়ে সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা বন্যা তাদের সকল আশা পানির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। এ উপজেলায় তিন সহস্রাধিক মাছের ঘের বন্যা ও ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ঘেরের সমস্ত মাছ। নষ্ট হয়ে গেছে ঘেরপাড়ে লাগানো বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষেত। ধার-দেনা করে ঘেরে মাছ ছেড়ে বিক্রির আগ মূহুর্তে সেই মাছ ভেসে আর সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব মৎস্য ও সবজিচাষি এখন দিশেহারা। কিভাবে ধারের টাকা শোধ করবেন, তা ভেবে দুশ্চিন্তায় তাদের দিন কাটছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘এ উপজেলায় তিন সহস্রাধিক মাছের ঘের বন্যা ও ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে। অধিকাংশ ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে আমাদের হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, ‘বন্যা ও ভারি বর্ষণে আমাদের উপজেলায় প্রায় ছয় কোটি টাকার সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।’
উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নেই ভেসে গেছে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ঘেরের মাছ। নিন্ম জলাভুমি বেষ্টিত এ ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামে তিন শতাধিক মাছের ঘের পানিতে ডুবে গেছে। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই আয়ের উৎস মাছ ও সবজি। মাছ ও ঘেরপাড়ে সবজি ফলিয়ে তা বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। চলে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচও। ঘেরপাড় পানিতে তালিয়ে যাওয়ায় এসব সবজিও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাংকঋণ মওকুফসহ নতুন করে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ এবং সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন এ সকল চাষি।
কুমুরিয়া গ্রামের বিণয় মণ্ডল বলেন, ‘আমি অন্যের জমি লিজ নিয়ে বেশ বড় একটি মাছের ঘের করেছিলাম। গত দুই বছর ধরে এই ঘেরে মাছ ও ঘেরপাড়ে সবজিচাষ করছি। এই করেই চলে আমার সংসার। এ বছর মাছ ও সবজি চাষ করতে আমার প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধার-দেনা করে এ বছর মাছ ও সবজি চাষ করেছি। কিন্তু, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে মাছের ঘের ডুবে যাওয়ায় সমস্ত মাছ ভেসে গেছে, নষ্ট হয়েছে ঘেরপাড়ের সমস্ত সবজি গাছ। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাবো বা ঋণের টাকা শোধ করবো। সরকার যদি আমাদের নতুন করে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ দেয় ও সার্বিক সহযোগিতা করে, তাহলেই আমরা বেঁচে থাকতে পারবো।’
কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে সহস্রাধিক ছোট-বড় মাছের ঘের পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে এ সকল ঘেরে সমস্ত মাছ। নষ্ট হয়ে গেছে ঘেরপাড়ের সবজি গাছও। এর মধ্যে কুমুরিয়া গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে । এই গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। অধিকাংশ ঘেরমালিকই ব্যাংকঋণ ও ধার-দেনা করে মাছ ও সবজির চাষ করেছেন। সরকার যদি তাদের সহযোগিতা না করে, তা হলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষকে পথে বসতে হবে।’
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মাছের ঘেরগুলো ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও সবজিচাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’