নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহামারি করোনার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানান জায়গায় পরিবর্তন হলেও থেমে নেই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারা প্রাণপনে লড়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ জায়গা থেকে। আর এরই ধারাবাহিকতায় মহামারির মধ্যেও চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
তবে আগস্টে এসে রেমিট্যান্সের গতি কিছুটা কমে গেলেও গত বছরের আগস্টের তুলনায় এবার রেমিট্যান্সে ২৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ কোটি ৯২ লাখ ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। আগের বছরের আগস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জুলাই ও আগস্ট মাস মিলিয়ে দেশে ৪৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের আয় এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, করোনার মধ্যেও প্রবাসীরা ভালো আয় পাঠাচ্ছেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় উঠেছে।
করোনার মধ্যেও ভালো প্রবাসী আয় আসার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা নানা তথ্য তুলে ধরছেন। তারা বলছেন, অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক দেশে করোনার কারণে বিশেষ ভাতাও পেয়েছেন প্রবাসীরা। সেসব অর্থ তারা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আবার প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা পেতে দেশের টাকা দেশে আসছে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যাংকার।
বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সেই অনুযায়ী গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। আবার সারা দেশের ব্যাংক শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট অনেকে আবার বলছেন, করোনার কারণে অনেক প্রবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। তারা সঞ্চয় ভেঙে দেশে আনছেন। দেশফেরত এসব মানুষকে কাজে লাগানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (পরিমাণ প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।