বেনাপোল প্রতিনিধি: পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না যশোরের শার্শা-বেনাপোলের চাষিরা। এ বছরও বাজারদর নিম্নমুখী হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না তারা। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে হাজার হাজার কৃষক।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে ব্যতিক্রমী চেয়ার তৈরি
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৪৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। অথচ এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পাটের আবাদ হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক পাট বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু বাজারে কাঙ্খিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ে তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা
কৃষকরা বলছেন, পাট চাষের শুরুর দিকে কাঙ্খিত বৃষ্টি পেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে শার্শা-বেনাপোলে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। এতে সেচ নির্ভর হয়ে পাট চাষে খরচ বেড়ে যায়। এমনিতে সার-কীটনাশক ও শ্রম খরচও আগের চেয়ে বাড়তি ছিল। অন্যদিকে পাট কেটে জাগ দিতেও বাড়তি শ্রমিক খরচ হয়েছে তাদের।
অনাবৃষ্টিতে খাল-বিলে পানি না থাকায় দূর-দূরান্তে যেখানে পানি ছিল, সেখানে জাগ দিতে খরচ বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে, সে তুলনায় বাজারে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাড়ছে পর্যটন কেন্দ্র
বেনাপোলের ভবারবেড় গ্রামের পাটচাষি জাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ১২০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছেন। এতে তার খরচও হয়েছে অনেক। তাছাড়া এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পাট কেটে জাগ দেওয়ার কোনো জায়গা পাননি। মেশিন চালিয়ে খানা গর্তে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে।
পাটের ফলনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে পাটের বাজারমূল্য আশানুরূপ না পাওয়ায় পাট চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
শার্শার স্বরূপদাহ এলাকার চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হন তারা। প্রথমত বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন।
আরও পড়ুন: মোরেলগঞ্জে সুপারির দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
অন্যদিকে বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, সেচ শ্রমিকের খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২৫০০-২৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০ টাকা মণ।
অথচ গত বছরে এই পাট ৩০০০-৩৫০০ টাকা বিক্রি হয়। শার্শার নাভারন, বাগআঁচড়া ও বেনাপোলের পাটের বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী জাবির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাজার থেকে তিনি পাট কিনে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান।
কিন্তু এ বছর বড় বড় মোকামে বেচাকেনা না থাকায় পাটের দাম কমে গেছে। মোকামে চাহিদা না বাড়লে পাটের দাম বাড়বে না বলে তিনি জানান। গত বছরের পাট এখনও গোডাউনে আছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে এখন স্বাবলম্বী চাষিরা
আব্দুল খালেক নামে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বাজারের পাটের মোকামে পাটের তিন ধরনের দাম রয়েছে। ভালো মানের পাট যেগুলোকে আমরা এ গ্রেড বলে সেগুলো ২২০০ টাকা মণ, বি গ্রেডের ১৯০০-২০০০ ও সি গ্রেডের মানের পাট ১৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর পাট জাগ দেওয়ার উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন কৃষকরা। যে কারণে যত্রতত্র তারা পাট দেওয়ার কারণে পাটের তেমন কোনো মান নেই। ফলে এ গ্রেডের পাটের খুবই সংকট। অথচ মিলগুলোতে এ গ্রেডের পাটের চাহিদা বেশি।
আরও পড়ুন: ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শায় ৫৪৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি। পাটচাষিরা সঠিক দাম পাওয়ার বিষয়টি জেলা কৃষি বিপণন অধিদফতর দেখেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এ বছর আমাদের জেলার চাষিরা পাটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না পেয়ে কিছুটা সংকটে পড়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্তির পথে বাঘ
তিনি আরও বলেন, পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা করছি আমরা। দাম বাড়লে কৃষকরা লাভবান হবে এবং ভবিষ্যতে জেলায় পাটচাষির সংখ্যা বাড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।
সান নিউজ/এনজে