আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চাল রফতানিকারক শীর্ষ দেশ ভারত তাদের রফতানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের পর থেকে বৈশ্বিক চালের বাজারে অস্থিরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আজ ঢাকার বায়ু সহনীয়
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ভারত এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শুক্রবার ক্রেতাদের সাথে চাল বেচা-কেনা সংক্রান্ত নতুন কোনো চুক্তি হয়নি এশিয়া, বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের রফতানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি চাল রফতানিকারক সংস্থার মালিক রয়টার্সকে জানান, শিগগিরই চালের দাম বাড়তে শুরু করবে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে প্রতি টন চালের দাম কমপক্ষে ৫০ ডলার বাড়বে এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৪
বৈশ্বিক বাজারে প্রতিদিন যে পরিমাণ চাল বেচা-কেনা হয়, তার ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে ভারত থেকে।
বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আবহাওয়াগত কারণে চালের উৎপাদন কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাসমতি ছাড়া অন্য সব চালের রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
ভারতের এ সিদ্ধান্ত জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই চালের দাম বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের প্রায় সব রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান নতুন চালানের অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখেছেন।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পুকুরে, নিহত ১৭
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সিঙ্গাপুরের ঐ ব্যবসায়ী জানান, এ মুহূর্তে আমরা সবাই সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি, বোঝার চেষ্টা করছি চালের দাম কী পরিমাণে বাড়তে পারে।
সিঙ্গাপুরের আরেক রফতানিকারী ব্যবসায়ী রয়টার্সকে জানান, আজ আমার সংস্থা কোনো বায়ারের সাথে চাল বিক্রি সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করেনি। অন্য সংস্থার খবর আমি জানি না।
তবে আমি বলবো, যেহেতু ভারত থেকে চাল আসা বন্ধ হয়েছে, সামনের দিনগুলোতে বায়ারদের চাল ক্রয় বাবদ আরও বেশি অর্থ ব্যয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে
থাইল্যান্ডের চাল রফতানিকারকদের সংস্থা থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিশেনের প্রেসিডেন্ট সুকিয়াত ওফাসওয়াংসে রয়টার্সকে জানান, আমাদের রফতানিকারকরা এ মুহূর্তে চাল বিক্রি করতে চাইছেন না। কারণ অনেক রফতানিকারকের ধারণা, সামনের দিনে প্রতি টন চালের দাম ৭০০-৮০০ ডলারে উঠবে।
উল্লেখ্য, চাল বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য, যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। প্রতিবছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে হয়।
আরও পড়ুন: উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাজ্জাদুল
চলতি বছর বর্ষায় ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাতের ভারসাম্যে ব্যাপক অবনতি হয়েছে। জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির উতরাঞ্চলী ও কেন্দ্রীয় রাজ্যগুলোতে অতিবর্ষণের ফলে পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে ভারতে উৎপাদিত চালের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে বলে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন দেশটির কৃষি বিজ্ঞানীরা।
সেই সতর্ক বার্তাকে আমলে নিয়েই বৃহস্পতিবার চাল রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
আরও পড়ুন: আজ সোহরাওয়ার্দীতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’
পৃথিবীর ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। আর ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারী দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত সবচেয়ে কম দামে চাল রফতানি করে।
গত সপ্তাহে টনপ্রতি ভারতীয় চাল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪২১-৪২৮ ডলারে। একই সময়ে ভিয়েতনামের চাল বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ৫১৫-৫২৫ ডলার এবং থাইল্যান্ডের চাল টনপ্রতি ৫৪৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন: চলতি জুলাই সবচেয়ে উষ্ণতম মাস
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এ মুহূর্তে বিশ্বে চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা ৬ টি দেশ।
কিন্তু এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়া, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বর্তমানে বাজারে চালের যে দাম, তা ইতিমধ্যে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
সান নিউজ/এনজে