নিজস্ব প্রতিবেদক:
টুনা মাছের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সরকারের। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকার গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা ও সমজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই ও আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে চায় সরকার। এজন্য ৬১ কোটি ৬ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে চলতি বছরের জুলাইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি সমগ্র চট্টগ্রাম জেলায় ২০২৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত তিন কারণে এ প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে−১. বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকা’র গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা ও সমজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই ও আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। ২. গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় অনাহরিত টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। ৩. গভীর সমুদ্র হতে টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি করা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় তিনটি লং লাইনার প্রকৃতির ফিশিং ভেসেল ক্রয় ও পরিচালনা করা হবে। টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণ করা এবং গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত পণ্য রফতানি করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সাগরের মৎস্য সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাব্যতা সৃষ্টি হবে, যা দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা করবে। এসব কারণে প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় অনাহরিত টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে। টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। এছাড়া গভীর সমুদ্র থেকে টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সরকার তার প্রাপ্য সম্পদ আহরণের বিষয়ে খুবই সচেষ্ট। সমুদ্রের জল সীমার অভ্যন্তরে টুনা মাছ আমাদের সম্পদ। এতদিন এ মাছ আহরণে নিজেদের অভিজ্ঞা ছিল না। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাড়বে। সম্পদও আহরিত হবে।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সাগরের টুনা মাছের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। দেশের বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাগর থেকে আহরণের পর তা রফতানি করতে পারলে আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেট ও ভলিয়্যুম সমৃদ্ধ হবে। বঙ্গোপসাগরের টুনা ও সমজাতীয় মাছ আহরণের যেমন অভিজ্ঞতা আমাদের নাই, তেমনি দক্ষ জনবলও নাই। এসব কারণেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি ইলিশের সঙ্গে টুনা হবে আমাদের সম্পদ।