হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর থেকে:
ঈদ-উল আযহার পর বাজার কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ করে চাল-সবজি এবং গরু-খাসির মাংসের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এতে দিশেহারা ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তবে ডিমের মূল্য স্বাভাবিক থাকলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ও বন্যায় বাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারের অস্বাভাবিক দরপতনে মাঠে নেই ভোক্তা অধিদপ্তর।
সরেজমিনে নগরীর সিটি বাজার, স্টেশন বাজার, মাহিগঞ্জ, লালবাগ, সাতমাথা, সিও বাজার, মডার্ন মোড়, তামপাটসহ বিভিন্ন বাজারে গেলে বিক্রেতারা দাবি করেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সারাদেশে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। যার প্রভাবে গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, করলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজির মূল্য বড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষার কারণে মান ও বাজারভেদে কেজিপ্রতি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কচুরমূখি ৫০ টাকা, কাকরোল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, দুধকুষি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকা হলেও দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা।
মাংসের মধ্যে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৮০ টাকা ও খাসির মাংস ৮০০ টাকায় উঠেছে। কয়েকদিন আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তবে ঈদের পর থেকে বাজারে ডিমের মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতি ১০০ ডিম ৮০০ টাকায় কিনে ৩৪ টাকা হালিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ী গুলসান আহমেদ ও হাজী বেলাল হোসেন বলেন, বাজারে মোটা চাল আসছে কম। বর্তমানে হাইব্রিড ও গুটি স্বর্ণা দুই হাজার টাকা বস্তায় (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চিকন চালের মধ্যে বিআর ২৮ দুই হাজার ৪০০ টাকা, বিআর ২৯ দুই হাজার ২০০ টাকা, কাটারিভোগ দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা ও নাজিরশাইল দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে বস্তাপ্রতি মূল্য কিছুটা কম ছিল। এখন বেড়েছে। আসলে বন্যার কারণে চাল সরবরাহ কমে গেছে।
সবজি ব্যবসায়ী শাকিল ও ওয়ারেজ মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকেও সবজির দাম অনেকটা কম ছিল। কয়েকদিন ধরে দাম বাড়ছেই। এখন বর্ষা ও বন্যার সময়। সব সবজির পচনটা তাড়াতাড়ি হয়। বেশিরভাগ সবজির মৌসুমও শেষ। কাজেই সহসা দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম।
কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ‘আসলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। করোনার সময়ে হাতের অবস্থাও ভালো নয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্যমূল্য বাড়ছে। সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। সরকারের নীতিনির্ধারকরা খেয়াল রাখলে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা উপকৃত হবেন।’
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর, রংপুরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘বাজারে মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। ব্যবসায়ীদের সর্তক করা ছাড়াও জরিমানা করি। হঠাৎ করে সবজির মূল্য বাড়ার খবর পেয়েছি। দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ে মাঠে নামবো।’
সান নিউজ/ এআর