নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্যা ও বৃষ্টিতে মরিচের খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য রান্নার অপরিহার্য এ পণ্যটির দাম বাজারে একমাসের বেশি সময় ধরে ব্যাপক চড়া। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
শুধু কাঁচা মরিচ নয়, বৃষ্টি ও বন্যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবজির দামেও। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা। চড়া দামের পণ্যের তালিকায় রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমও।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার, উত্তর পীরেরবাগ কাঁচাবাজার ও মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে চড়া দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঝিঙে, কাঁকরোল, বেগুন, পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি করলা ও ঢ্যাঁড়সের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, শসার কেজি ৬০ টাকা। প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা ও জালি ৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, যেসব এলাকায় সবজি চাষ হয়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ সবজিখেত বৃষ্টি ও বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এই সময়টায় গ্রীষ্মকালীন সবজির মৌসুম শেষের দিকে বলে সরবরাহও কম থাকে। ফলে দাম চড়া।
কল্যাণপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মোস্তফা জানান, মানিকগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকা থেকে সবজি আনতেন তিনি। এসব এলাকায় পানি ওঠায় সবজির দাম এখন বাড়তি। তবে পানি নামতে শুরু করায় সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সবজির দাম আবার কমতে পারে।
সবজির মতো আলুর দামও লাগামছাড়া। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, আলুর দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি। মান ভেদে এখন আলো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
মিরপুর-১ কাঁচাবাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী আকতার হোসেন বলেন, গত কয়েক মাসে মধ্যবিত্তের আর্থিক অবস্থা অনেকটাই খারাপ হয়েছে। এই সময়ে বাজারেও কোনো স্বস্তি ছিল না। আগে যে দামে এক কেজি সবজি পাওয়া যেতো, এখন সেই দামে আধা কেজি কিনতে হচ্ছে।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা। পাড়ার দোকানে একই ডিম কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর একটি-দুটি কিনলে হালি ৪০ টাকা। বাধ্য হয়ে নিম্নআয়ের লোকজন বাজার থেকে কম দামে ভাঙা ডিম কিনছেন।
পীরেরবাগ বাজার থেকে ২০ টাকা দিয়ে এক হালি ভাঙা ডিম কিনেছেন মরিয়ম বেগম। তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। মরিয়ম বেগম বললেন, করোনার কারণে কয়েকটা বাসায় কাজ থেকে তাকে বাদ দিয়েছে। কিন্তু খরচ তো কমেনি। ভাঙা ডিম নিলে ২০ টাকা বাঁচে।
বাজারে ইলিশের সরবরাহ ভালো, দামও তুলনামূলক কম। মৌসুমের শুরুর দিকে এক কেজির ইলিশের দাম হাজার টাকার বেশি থাকে। এখন এক কেজির ইলিশ ৯০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর মাঝারি আকারের ৮০০ গ্রাম ওজনের একেকটি ইলিশের দাম পড়ছে ৭০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ইলিশের দাম আরও কমবে।
বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়, যা কোরবানির ঈদের আগে ছিল ১৪০ টাকা। কল্যাণপুর নতুন বাজারের মুদিদোকান কামাল স্টোরের বিক্রেতা মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, আদার দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। ঈদের পরে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। দুই দিন ধরে ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়, যা ঈদের আগে ১০০ থেকে ১১০ টাকা ছিল। আড়তে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, আমদানি মূল্যসহ সব খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি আদা এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতেও লোকসান হচ্ছে।
বাজারে এখন মোটা চাল ও মসুর ডালের দামও চড়া। ফলে বিপাকে আছেন আয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষ। টিসিবি বলছে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম কেজিতে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। ৪৫ টাকার নিচে এখন মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে মোটা দানার মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ এবং মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম ৪৬ শতাংশ বেশি। বড় দানার ডালের কেজি ৮০ টাকা এবং মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম ১০০ টাকা। আর ছোট দানার মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকা।
সান নিউজ/ আরএইচ/ এআর