মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: ধলেশ্বরী নদী সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুরে গড়ে উঠেছে তরমুজের আড়ত। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অব্দি চলে কেনাবেঁচা। বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ। পাইকারি ও খুচরা বিক্রিতে জমজমাট এখন এখানকার আড়ত। একদিনেই এ আড়তের ১২ জন আড়তদার বিক্রি করছেন ১ লাখের মতো তরমুজ।
আরও পড়ুন: ইকুয়েডরে ভয়াবহ ভূমিধস, নিহত ১৬
এদিকে, ৫ বছর আগেও ধলেশ্বরীর তীরের এ আড়তে হাতেগোনা ৫-৬ জনের মতো আড়তদার ছিলো। কালক্রমে আড়তদারের সংখ্যা বেড়ে ডজন খানেকের বেশি দাঁড়িয়েছে। দেশের বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও রাঙ্গাবালী থেকে ট্রলারে করে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরীঘাটে নিয়ে আসে তরমুজ। একেকটি ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ হাজার তরমুজ থাকে। প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০ টির মতো তরমুজ বোঝাই ট্রলার এসে থাকে। এক কথায় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ পিস তরমুজ আসে এ আড়তে।
এছাড়া তরমুজ কিনে নিতে আড়তে আসেন মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকার পাইকাররা।
অন্যদিকে, ভোরের আলো ফুটতেই হাকডাক শুরু হয় মুক্তারপুর এলাকার বৃহত্তর তরমুজের আড়ত। ধলেশ্বরী তীরে পুরাতন ফেরী ঘাটে আসা সারিবদ্ধ ট্রলার থেকে আড়তে মজুদ করতে থাকেন তরমজু আর তরমুজ। আড়তে মজুদ করার পর সকাল ৬ টার দিকে পাইকারদের জন্য উন্মুক্ত ভাবে তরমুজের ডাক শুরু করেন আড়তদার।
আরও পড়ুন: সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন নেই
আড়তের সামনে ১০০ থেকে ১৫০ টি আলাদা আলাদা সাইজের তরমুজের ছোট ছোট স্তুপ করে ডাকতে শুরু করেন বিক্রির জন্য।
এ সময় দুর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা ডাকের স্থানে ভিড় জমান। বড় সাইজের তরমুজ গুলো প্রথমে ২০০ টাকা দিয়ে ডাকা শুরু হয়। এরপর সর্বোচ্চ দাম হাকিয়ে পাইকার কিনে নিতে সমর্থ হন তরমুজের স্তপ। এতে করে ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে যান পাইকাররা একেকটি তরমুজ। এ আড়তে মাঝারি সাইজের তরমুজ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও ছোট সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়। সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত ১২ টা পর্যন্ত চলে তরমুজ বিক্রির হাকডাক।
বরিশালের তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত রাঙ্গাবালীর চাষী মোহাম্মদ বায়েজিদ বলেন, ৬ জন চাষীর ১০ হাজার তরমুজ নিয়ে ট্রলারের করে এ আড়তে এসেছি। ট্রলারে করে আসতে সময় লেগেছে ১২ ঘন্টার মতো। এখানে দাম বেশ ভালো, পরিবেশও ভালো।
রাঙ্গাবালীর অপর চাষী রহিম খাঁ বলেন, আগে ঢাকার আড়তে তরমুজ বিক্রি করতাম। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে এ আড়তে আসি। ঢাকার চেয়ে এখানে তরমুজের চাহিদা বেশী। দাম ও পরিবেশ ভালো। ভোগান্তি নেই। তরমুজ বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। তাই তরমুজ পঁচে যাওয়ার আশংকা থাকে না।
আরও পড়ুন: বিশ্বে আরও ২৭৮ প্রাণহানি
তরমুজ কিনতে আসা পাইকার রফিক হোসেন বলেন, প্রতিদিনই এ আড়ত থেকে তরমুজ কিনে থাকি। এরপর নারায়নগঞ্জের সৈয়দপুরে নিয়ে বিক্রি করি। গেলো কয়েকদিনের তুলনায় এ আড়তে এখন দাম অনেকটাই কম।
অপর পাইকার ফালান মিয়া বলেন, ৩৫ বছর ধরে তরমুজ-বাঙ্গী বিক্রির ব্যবসা করে আসছি। ৮ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ সদরের কাঠপট্টি আড়তে আসতাম। এখন ফলের মৌসুম হওয়ায় মুক্তারপুর আড়তে তরমুজের বাজার বেশ জমে উঠেছে। এ আড়তে দাম ও সুযোগ ভালো। তাই ৫ বছর ধরে এ আড়ত থেকেই তরমুজ কিনছি।
আড়তদার আলিফ সাইফ ভান্ডারের মালিক আল-আমিন মুন্সী বলেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান। এখানে পাইকারদের কোন সমস্যা হয় না। প্রতিদিন ভোরে তরমুজ বেচাকেনা শুরু হয়ে রাত ১২ টা পর্যন্ত চলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতা বিক্রেতারা সহজে এসে এখান থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান।
মুক্তারপুর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের এই আড়ত বর্তমানে ১২ জন আড়তদার রয়েছেন। এ আড়তে এক লাখেরও বেশি তরমুজ বিক্রি হয়। যার মূল্য ১ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুলত: মৌসুমের দেড়মাস এ আড়তে বেচাকিনি জমজমাট হয়।
সান নিউজ/এনকে