নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: পুরনো ঋণ শোধরাতে পারেননি। তাই নতুন করে চামড়া কিনে আর কোনো দেনায় জড়াতেও চাননি ব্যবসায়ীরা। সে কারণে বরিশাল বিভাগীয় চামড়ার মোকাম বলে পরিচিত পদ্মাবতী চামড়া শিল্প এলাকায় এবার বিকি-কিনি নামমাত্র। একসময়ের আলোচিত এই ব্যবসায়িক জােনে গড়ে ওঠা ব্যবসায়িক মালিক সমিতিও টিকে আছে নামেমাত্র। ৫৪ সদস্যের সেই কমিটিতে নাম আছে সবার। কিন্তু ব্যবসার ধরন বদলে ফেলেছেন ৫২ জনই। তারা এখন পুরোদস্তুর পোশাক ব্যবসায়ী।
নগরীর পদ্মাবতী এলাকার সেই চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহিন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কবলে চামড়া ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি নিজেও তাই চামড়া ব্যবসা বাদ দিয়ে কাপড়ের ব্যবসায় নেমেছি।’
শাহিন বলেন, ২০ জনের বেশি চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। তারা বরিশালে চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাতেন। কিন্তু চামড়ার দরপতন অব্যাহত থাকায় এখন পাইকারি ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে। এবার মাত্র দুইজন চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
এখন পর্যন্ত চামড়া ব্যবসা ধরে রেখেছেন পদ্মাবতী চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই ব্যবসা করে আমি বিল্ডিং করেছিলাম। এখন সেই ব্যবসার লোকসান দিতে দিতে দুটি বিল্ডিং বিক্রি করেছি। অবশিষ্ট আছে ফকির হিসেবে পথে বসার। চামড়া ব্যবসা করে আমার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এসেছিল, সেই মায়ায় ব্যবসাটি বদলাতে পারিনি।’
বরিশাল জেলায় এই একটি কমিটি ছাড়া বিভাগের আর পাঁচ জেলায় চামড়া ব্যবসায়ীদের কােনো কমিটি নেই। বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা এবং ঝালকাঠি জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ কেউ চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় পাঠান। তবে সেই সংখ্যাও এখন তেমন উল্লেখযোগ্য নেই বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চামড়া সংগ্রহ করতাম। কিন্তু এ বছর কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। সামর্থ্য অনুসারে যা পেরেছি, সেটাই করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিভাগ থেকে ছয় হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। এই মৌসুমে সর্বোচ্চ দশ হাজার পিস সংগ্রহ হতে পারে। গত বছর ঈদ-উল-আযহায় মোট ১৩ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল।’
প্রত্যেক বছর চামড়া কেনার পরিসর কমছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা চামড়ার আড়তদারদের বকেয়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। ফলে আমরা আছি মহাবিপাকে। আমরা যে চামড়া কিনি তার একটি বৃহদাংশ আসে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ না করায় বছরের পর বছর পার হলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে পারি না। ফলে তাদের সঙ্গেও সর্ম্পকের অবনতি হচ্ছে।’
সরকারি প্রণোদনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছর সরকার ৫৫০ কোটি থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সে ঋণ কাকে দিয়েছে কাকে দেয়নি সেটা আমরা জানি না। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা কেউ কেউ বলছেন, তাদের ঋণ হয়নি। এ অবস্থায় ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচার টাকা দিয়েছেন। এক কথায় আমরা কিছুই পাইনি। আমাদের ঢাকায় দেড় কোটি টাকা পাওনা, পেয়েছি এক লাখ টাকা। এভাবে চললে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায়।’
সান নিউজ/ এআর