সান নিউজ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়মিত বেড়েই চলেছে। এবার বাড়তে যাচ্ছে বিদ্যুতের দাম। নেপথ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে।
আরও পড়ুন : রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর ।
রোববার (৮ জানুয়ারি) এ বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে, গত ২১ শে নভেম্বর বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়ায় বিইআরসি। পাইকারিতে বাড়ানো হয় ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপরই বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাব দেয় খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর।
আরও পড়ুন : খুলনার ঝুট গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
অপরদিকে, মূল্য পুনঃনির্ধারণের জন্য আবেদন করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পিডিবি প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ টাকা ৩ পয়সা করার আবেদন করেছে।
কারণ, দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থ বছরে ছয় মাসে (জানুয়ারি ২০২৩-জুন ২০২৩) লোকসান হবে ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ডিমান্ড চার্জ ও নিরাপত্তা জামানত ৫০ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন : শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এতে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ৩৫ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে এক হাজার ৩৪১ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে বলে জানানো হয়।
ডেসকো ২০ দশমিক ২৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে দাম না বাড়ালে প্রথম ছয় মাসে ৯৫৬ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা লোকসান হবে।
ডিপিডিসি আবেদন করেছে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর। দাম বাড়ানো না হলে তাদের ছয় মাসে (জানুয়ারি ২০২৩-জুন ২০২৩) এক হাজার ১০৯ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা লোকসান হবে।
আরও পড়ুন : বাণিজ্যমেলা ক্রেতা-দর্শনার্থীতে জনসমুদ্র
প্রি-পেইড গ্রাহকদের রিবেট সুবিধা প্রত্যাহার ও সড়ক বাতির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ডিপিডিসি।
২১ জেলার বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওজোপাডিকো আবেদন করে ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর। দাম বাড়ানো না হলে (জুন ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) কোম্পানিটির ৫৬৬ কোটি টাকা ।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বিদ্যুৎ বিতরণকারী নেসকো খুচরা দাম ৭ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। দাম না বাড়ালে এ অর্থবছরে লোকসান হবে ৫৩৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন : শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
অধ্যাপক ড. শামসুল আলম কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুত কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হলে খরচ কমে আসবে। তখন দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তা না করে গ্রাহকের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে ভোক্তার কোনো জবাবদিহিতা থাকলো না। এখন কমিশন যেসব কাজ করবে সেটি এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বলেন, বিইআরসির কাছে আবেদন দাখিল করেছে। ফলে মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের লিখিত কোনো জবাব পাইনি। তবে আমরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছি আমাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী।
আরও পড়ুন : ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও গ্রাহকের কথা বিবেচনা করা হবে। সরকার ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে। যা কিছু করা হচ্ছে ভোক্তার কথা চিন্তা করেই করা হচ্ছে।
বিইআরসি গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করে।
আরও পড়ুন : বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০০৩-এ স্বাক্ষর করেছেন, সেই অধ্যাদেশের মূল সংশোধনে বলা হয়েছে, এ আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুদকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।
সান নিউজ/জেএইচ/এইচএন