নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: এবারও ঈদ-উল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে চরম ধস নেমেছে। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে চামড়া। সরকার নির্ধারিত দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন কম টাকায় চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার (২ আগস্ট) গরুর চামড়ার মান ও আকারভেদে বিক্রি করা হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি করা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
ফলে খুলনার বিভিন্ন মাদ্রাসায় দান করা চামড়া বিক্রি করতে হতাশায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকরা কোরবানির ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ বছর চামড়ার দাম যে হারে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে চামড়া সংগ্রহের যাতায়াত ব্যয় ওঠানো কঠিন হচ্ছে। তাছাড়া এবার করোনার কারণে কোরবানিও কম হওয়ায় চামড়াও কম সংগ্রহ হয়েছে। মাদ্রাসার এতিমখানার জন্য ১৭৫টি গরুর চামড়া ও ৩৫টি ছাগলের চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। এগুলো নোয়াপাড়া লেদার মার্কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
চামড়া সংগ্রহকারী হাকিম, সোলেমান ও সুলতান খুলনার শেখপাড়া চামড়াপট্টিতে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে এসে অভিযোগ করেন, দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়ার সঠিক দাম পাচ্ছে না। যে দাম বলেন, তাতে তাদের খরচও উঠে না। আকারভেদে খুলনায় গরুর চামড়া ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের চামড়ার দাম ১০-২০ টাকা।
শেখপাড়া চামড়াপট্টির শহিদুল আলম বলেন, ট্যানারি মালিকরা গত বছরের টাকাই এখনও পরিশোধ করেননি। এছাড়াও ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন। চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে লবণ। এবার ১৮-২০ বর্গফুটের চামড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ও ৩০-৩২ বর্গফুটের চামড়ার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। গত বছর এই চামড়ার দাম ছিল ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
শেখপাড়া চামড়াপট্টির সভাপতি আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে আগের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় আমরা নিজেরাই রয়েছি চরম অর্থ সংকটে। গত বছরের চামড়া ট্যানারিতে এখনও মজুদ রয়েছে। তাই ট্যানারিতে চামড়া নেওয়ার আগ্রহ কম। এর সঙ্গে আছে করোনার প্রভাব ও চড়া মূল্যে লবণ কেনা। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার বাজার গত বছরের চেয়েও অনেক খারাপ।’
এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষক আ. রহমান বলেন, সবকিছুর মূল্য যখন আকাশচুম্বী, তখন কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নিম্নমুখী। দুই হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন ২০০ টাকায়ও বিক্রি হয় না। গার্মেন্টস ও পাটশিল্পের মতো চামড়া শিল্পের বাজারও অন্য দেশের হাতে চলে যাচ্ছে। কোরবানির পশুর চামড়া গরিবের হক, এই দান দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠার উপযুক্তস্থল। মাদ্রাসাগুলোর অর্থ সংস্থানের অন্যতম উৎস দান করা কোরবানির পশুর চামড়া। চামড়ার দাম না থাকায় মাদ্রাসাগুলো আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
মাদ্রাসার আর এক শিক্ষক মুফতি কারিমুল ইসলাম বলেন, খুলনার দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অর্থনৈতিক সংকটে। পশুর চামড়ার মূল্যহ্রাসে সরাসরি প্রভাব পড়েছে মাদ্রাসা, হেফজখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানাগুলোতে। চামড়ার মূল্য কমিয়ে এতিমদের মুখের খাবার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তিন-চার বছর আগে চামড়া তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর ৫০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এবার আরও খারাপ অবস্থা। বলতে গেলে সংগ্রহ করতে যা ব্যয় হচ্ছে, চামড়া বিক্রি করে তা উঠছে না। চামড়া ব্যবসায়ীরা নামমাত্র মূল্য দিয়ে গরিবের হক নিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালে দেশে কোরবানির ঈদে গরুর চামড়ার বর্গফুট প্রতি দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা। চলতি বছর তা নেমে এসেছে ৩৫-৪০ টাকায়। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে গরুর চামড়ার দাম ৫০ শতাংশ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে ২৯ শতাংশ।
সান নিউজ/ এআর