হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর থেকে:
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহার মাত্র দুদিন বাকি থাকলেও আগের মতো ব্যস্ততা নেই রংপুর নগরীসহ জেলার কামারপল্লীতে। এ সময়টাতে দম ফেলানোর সময় পান না কামাররা। তবে এবার করোনা আর কয়েকদফার বন্যায় তাদের পেশায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে। দিনে অল্প কিছু লোক আসেন তাদের পুরনো দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি ধার দিতে। নতুন কোনো যন্ত্রপাতি বিক্রি হচ্ছে না। ফলে আগের মতো কাজ না থাকায় অলস সময় কাটছে কামারদের।
সরেজমিনে নগরীর কামারপাড়া, আশরতপুর, বুড়িরহাট, কামারের মোড়, লালবাগ, মডার্ন, মাহিগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন কামারপাড়ায় গেলে কামাররা বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ১০-১৫ দিন আগে থেকেই ব্যস্ত সময় পার করি। এবার ঘটছে তার উল্টো। করোনা আর কয়েক দফা বন্যায় মানুষ অর্থ সংকটে রয়েছেন। ফলে পশু কোরবানির হার কমায় কমেছে দা, ছুরি, বটি ও চাপাতির চাহিদাও। কাজ আর আয়-রোজগার না থাকায় আমরাও জীবন ও জীবিকা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
নগরীর আশরতপুর কামারের মোড় এলাকার রতন কর্মকার (৩৫) বলেন, ‘আমার দোকানে আমিসহ আরও দুইজন কর্মচারী রয়েছেন। কোরবানির ঈদকে ঘিরে বছরের সবচেয়ে বেশি কাজ করে আসছিলাম। কিন্তুু এবার কাজের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ফলে আমাদের আয় নেই বললেই চলে।’
সুকুমার চন্দ্র কর্মকার (৪৫) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার মাধ্যমে কামারের কাজ শিখি। পরে এটাকে পেশা হিসাবে নেই। এখন আমার দুই ছেলেও এই পেশায় যোগ দিয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে দেখেছি, জেনেছি, কোরবানির ঈদে সব থেকে ব্যস্ত থাকেন কামাররা। কিন্তু এবার ঘটেছে তার ব্যতিক্রম, কাজ খুব হালকা। ফলে আয় কমে গেছে। অনেকে গরুর বদলে খাসি কোরবানি দিচ্ছেন, ফলে হাতিয়ার তৈরির চাহিদাও কমে গেছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা সাড়ে ছয় লাখ হলেও কোরবানিযোগ্য পশু মজুত আছে সাত লাখ ৭২ হাজার ৮৮১টি। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভি ও মহিষ চার লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৪টি, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য দুই লাখ ৭১ হাজার ২৩৩টি এবং গৃহপালিত পশু আছে এক লাখেরও বেশি।
সান নিউজ/ এআর