হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর থেকে:
পবিত্র ঈদ-্উল আজহাকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের আট জেলায় খামার ও বাসা-বাড়িতে কোরবানিযোগ্য প্রায় আট লাখ পশু প্রস্তুুত করা হয়েছে। তবে করোনা ও বন্যা দুর্যোগে পশুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে নগরীরসহ রংপুর বিভাগের দেড় লাখ খামারি সংশয়ে আছেন। অনেকেই কম দামে গরু বিক্রি করছেন।
তবে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা, চলতি বন্যা ও লাম্পিং ডিজিজের প্রভাব পড়বে না কোরবানির পশু বিক্রিতে। চাহিদার চেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে। তাই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পশু যাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এজন্য সড়কপথের পাশাপাশি নতুন সংযোজন হিসেবে রেলপথকেও বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদের যৌথ উদ্যোগে অনলাইনে সহজে পশু কেনার সুব্যবস্থাও করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে গোটা বিভাগে প্রায় শতাধিক কোরবানির পশুর হাটে কেনা-বেচার ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. হাবিবুল হক জানান, বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা সাড়ে ছয় লাখ হলেও কোরবানিযোগ্য পশু মজুত আছে সাত লাখ ৭২ হাজার ৮৮১টি। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভি ও মহিষ চার লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৪টি, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য দুই লাখ ৭১ হাজার ২৩৩টি এবং গৃহপালিত পশু আছে এক লাখেরও বেশি।
তবে বিভাগীয়, জেলা ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের এতো উদ্যাগের পরও পশুর কাঙ্খিত দাম পাওয়া নিয়ে খামারিরা সংশয়ে আছেন। করোনা ও বন্যার প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের হাটগুলোতে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ। গরু কেনায় তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। হাটে সাধারণ ক্রেতাদেরও নেই ভিড়।
রংপুর নগরীর পশ্চিম খটখটিয়ার জোবেদা লাইভস্টক কমপ্লেক্সের পরিচালক রেজওয়ানুল হক টফি জানান, শিক্ষিত হয়ে দেশে কোনো চাকরি জোটেনি তার ভাগ্যে। সংসারের বোঝা না হয়ে পাড়ি জমান বিদেশে। সেখানে পাঁচ বছর থাকার পর বাড়িতে এসে শুরু করেন গরু মোটা-তাজা করার প্রকল্প। তার খামারে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের ১৫টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর পেছনে প্রতিদিন তার খরচ হচ্ছে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। গত বছর পশু খাদ্যের দাম কম থাকলেও এ বছর করোনা ও বন্যার কারণে খাদ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি গরুর দাম। এখন পর্যন্ত অনেকেই খামারে এসে গরুর দাম বললেও তাতে তার গরু কেনা ও লালন-পালনের দাম উঠবে না বলে তিনি দাবি করেন।
সাতমাথা বীরভদ্র গ্রামের খামারি আফজাল পাটোয়ারী ও সুজন পাটোয়ারী গত এক দশক ধরে গরু মোটা-তাজাকরণ প্রকল্প করে এলেও এবারের ঈদে পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন না জেনে অনেক আগেই কম দামে গরু বিক্রি করেছেন। বুক ভরা আশা নিয়ে তার মতো অনেকেই গরু লালন-পালন করলেও এ বছরও শঙ্কায় আছেন বিভাগের এক লাখ ৫৫ হাজার ৮০২ জন খামারি।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম জানান, ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নিরাপদে পশু কেনা-বেচা করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি পশুর হাটে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধাসহ জালটাকা শনাক্তকরণ মেশিন থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর থাকবে।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, দেশীয় শিল্প রক্ষায় ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদে পশু পরিবহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সান নিউজ/এআর