বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:
ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জেও বসেছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল এলেও করোনার কারণে সাধারণ মানুষের আয়ের উৎস কমে যাওয়ায় ক্রেতা অন্য বছরের তুলনায় কমেছে। নেই আশানুরুপ বেচা-কেনা । গরুর দামও অন্য বছরের তুলনায় কম। ফলে গৃহস্থ ও খামারিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১৩টি পশুর হাট বসবে। অনলাইনেও চলবে বেচা-কেনা।
এ পর্যন্ত বসা বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত গরু আছে, কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। যারা হাটে আসছেন, তাদের কেউ কেউ গরু কিনলেও বেশিরভাগই গরু দেখে চলে যাচ্ছন। এবার করোনা প্রাদুর্ভাবে মানুষের আয়ের উৎস কমে যাওয়ায় অনেকেই চাইলেও কোরবানি দিতে পারছেন না। গত বছর যারা নিজেরা পশু কোরবানি করেছেন, এবার তারা ভাগে কোরবানি করার চিন্তা-ভাবনা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই গরুর কেনা-বেচা অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। তাই গরুর যে দাম দেখা যাচ্ছে, এভাবে চললে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা।
কাশিয়ানী উপজেলার পরানপুর গরুর হাটে ব্যবসায়ী আব্দুল কাউয়ুম বলেন, করোনার কারণে মানুষের আয় ইনকাম নেই। এবার তাই কাস্টমারও নেই। এজন্য গরুর কোনো দামই নেই। যারাও বা হাটে আসছেন, তারা কেনা দামের চেয়ে গরুপ্রতি ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাম কম বলছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘হাটে নয়টি গরু এনেছিলাম। একটাও বেচতে পারিনি। খরিদ্দাররা দেখে দেখে চলে যান। কোনো দর দাম বলেন না।’
গরুব্যবসায়ী রহমান মোল্লা বলেন, ‘হাটে ছয়টি গরু নিয়ে আসি । কোনো বেচা-কেনা নেই। ক্রেতা কম। যা দাম বলেন, তাতে অনেক লস থাকে। গরুপ্রতি ৫/১০ হাজার টাকাও থাকে না। গরু নিয়ে হাটে এসেছি, এখন ওইটাই ব্যয় হবে। অন্যবার গরু ও মানুষের ভিড়ে হাট জমে উঠতো। এবার করোনার কারণে তা হচ্ছে না। বেচা-কেনাও হচ্ছেনা। এলাকার মানুষ কিছু আসছেন, কিন্তু দাম বলছেন কম।’
হাটে আসা কাশিয়ানীর চাপতা গ্রামের পরশ উজির বলেন, ‘পরানপুর গরু হাট প্রায় ১০০ বছরের পুরানো হাট। এই হাট থেকে আমরা সব সময় কোরবানির গরু কিনে থাকি। এবার ক্রেতার সংখ্যা কম। গরু এসেছে অনেক । কিন্তু করোনার কারণে তুলনামূলক দাম কম।’
গোপালগঞ্জ শহরের মডেল স্কুল রোডের মারুফ শেখ বলেন, ‘প্রতি বছর একটি গরু কোরবানি দিয়ে থাকি। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর ব্যবসা বাণিজ্য নেই। তাই এবার ভাগে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজিজ আল মামুন জানান, এ বছর জেলায় চার হাজার ৩৬৫টি পরিবার ২৯ হাজার ৯৮৩টি পশু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা-তাজা করেছেন। এছাড়ার গৃহস্থরা গরু বা ছাগল লালন-পালন করে থাকেন। এসব পশু বিক্রির জন্য জেলায় ১৩টি হাট বসবে। এসব হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যেন মানুষ নিরাপদ দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ গরু কেনা-বেচা করতে পারেন। আমরা সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবো। করোনার কারণে খামারিদের কথা চিন্তা করে অনলাইনেও কোরবানির হাট করা হয়েছে। সেভাবেও অনেক গরু বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্নভাবে খামারিদের গরু বিক্রিতে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
সান নিউজ/ এআর