নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে শ্রমজীবি শিশু ও তাদের পরিবার।
রাজধানীর কমলাপুর, মুগধা, ভাষাণটেক ও মোহাম্মদপুর এই চারটি এলাকায় দৈব চয়নের ভিত্তিতে ২৪০ জন শ্রমজীবি শিশুর উপর করা জরিপে দেখা গেছে, করোনার কারণে আয় রোজগার কমে যাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করেছে ৫০.৫ শতাংশ শিশু।
এদের মধ্যে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। যা ঢাকা শহরে দৃশ্যমান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট- এএসডি’র উদ্যোগে পরিচালিত ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ঢাকায় কর্মরত শ্রমজীবি শিশুদের অবস্থা যাচাই’ শীর্ষক এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। ৩০ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, করোনার বিরূপ পরিস্থিতিতে ঢাকায় শ্রমজীবি শিশুদের ৮৬.৬ শতাংশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব শিশু আগে কাজ করতো তাদের ৩৬.৬ শতাংশ বলছে, বর্তমানে তাদের কোনো কাজ নেই। করোনার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা ক্রেতা না থাকায় বিক্রি কমে গেছে। পেশা পরিবর্তন ছাড়াও করোনার কারণে শিশুদের স্বাভাবিক আয় কমে গেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৩০.৯ ভাগ শিশু বলেছে, তাদের আয়ের উপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল। জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমজীবি শিশুদের সবাই প্রাণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসের কথা শুনেছে। জরিপের সবচেয়ে ইতিবাচক খবর হলো, এসব শিশুদের পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তবে করোনাকালীন সময়ে কাজ করলেও শিশুদের ৫১ ভাগ কাজে যাবার সময় মাস্ক ব্যবহার করেনি। জরিপকৃত শিশুর ৩২ শতাংশ করোনাকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে সার্বিকভাবে শিশুরা ভিন্ন-ভিন্ন ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত নিম্ন ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পরিবারে কমে যাওয়া আয়ের যোগান দিতে গিয়ে অনেক শিশুই শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে। তারা সস্তায় শ্রম বিক্রি করবে। এমনকি অনেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। তৃতীয়ত অনেক মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হবে। চতুর্থত স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হবে।
তিনি আরও বলেন, মহামারি করোনার কারণে বেসরকারিভাবে পরিচালিত শিশুদের অনেক স্কুল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিক বিবেচনায় শ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি, বাল্যবিবাহের কারণে শিশুরা শিক্ষার মূলধারা থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এসব শিশুদের বড় অংশ শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়বে, এসব কারণে শিক্ষার অগ্রগতির সূচকে আমাদে দেশ পিছিয়ে পড়বে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে এবং শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টা নানাভাবে ব্যহত হবে।
সান নিউজ/ আরএইচ