নিজস্ব প্রতিবেদক:
আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক খাত। বাতিল ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা। নতুন করে আসছে ক্রয়াদেশও।
এরই মধ্যে অনেক কারখানাতেই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করার মতো পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে বিপর্যস্ত রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাতটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বর্তমানে যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ আসছে, সেটিকে অবশ্য মন্দের ভালো বলছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। অন্তত আটজন কারখানামালিক জানান, গতবারের তুলনায় বর্তমানে ৭০-৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ আসছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সাহস জোগাচ্ছে। অনেকগুলো বড় ব্র্যান্ড স্থগিত ও বাতিল করা ক্রয়াদেশের পণ্য আবার নিতে শুরু করায় পোশাক রপ্তানি গত জুনে বেশ খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তবে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস ও টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় একধরনের অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে সেখানকার বড় ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে থাকেন। এদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মাসখানেক পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তাতে এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপরও বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম।
১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের পাঁচটি কারখানা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও সদ্য বিদায়ী ২০১৯–২০ অর্থবছরে তারা রপ্তানি করেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের পোশাক। তার আগের অর্থবছরের চেয়ে তাদের রপ্তানি কমেওনি, বাড়েওনি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক জিনসের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরপরই ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে শুরু করেছেন। আমাদের কারখানায় গতবারের চেয়ে বর্তমানে ৬০-৭০ শতাংশ ক্রয়াদেশ রয়েছে।’
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রয়াদেশ আছে। তারপরের ক্রয়াদেশও আসছে। তবে আসার গতিটা কম। অনেক সময় ক্রেতারা কারখানা বুকিং দেওয়ার পরও নানা কারণে শেষ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ দেন না। ফলে কিছুটা অনিশ্চয়তা তো আছেই।
এদিকে করোনায় একেবারে ক্রয়াদেশ কমেনি, এমন কারখানার খোঁজও পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরোনো এক উদ্যোক্তা জানান, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রয়াদেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই তাঁর। গতবারের মতোই ক্রয়াদেশ রয়েছে কারখানায়। করোনায় ক্রয়াদেশ তো কমেনি, বরং নতুন দুটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ পেয়েছেন তিনি।
পোশাক খাতের আরেক বড় প্রতিষ্ঠান ঢাকার রাইজিং গ্রুপ। তাদের পোশাক কারখানার সংখ্যা ৭টি। ওয়ালমার্ট, ইন্ডিটেক্স, প্রাইমার্ক, টার্গেট, কিয়াবি, কে-মার্টের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করা রাইজিং গ্রুপের রপ্তানির পরিমাণ বছরে ১৩ কোটি ডলার।
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমাদের সাতটি কারখানার মধ্যে ছয়টিতে ভালো ক্রয়াদেশ আসছে। সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় ক্রয়াদেশের পরিমাণ ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। তা ছাড়া মার্চে বাতিল ও স্থগিত হওয়া সব ক্রয়াদেশের পণ্য ক্রেতারা নিতে শুরু করেছে। যদিও একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যছাড় দিতে হয়েছে।’
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে বর্তমানে ক্রয়াদেশ আসার হার দেখে ভরসা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমরা টিকে যেতে পারব।’
উদ্যোক্তারা গতবারের তুলনায় ৭০-৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ প্রাপ্তির যে কথা বলছেন, তার সঙ্গে রপ্তানি আয়ের চিত্রও মিলে যাচ্ছে।
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গত বুধবার জানিয়েছে, ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ডলারের পোশাক।
সান নিউজ/ আরএইচ