সান নিউজ ডেস্ক: ভারত থেকে রেলপথে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির পাশাপাশি এবার একইভাবে পণ্য রপ্তানিরও সুযোগ পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেলপথ ব্যবহার করে ভারতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পেলে তা অনেক সুবিধা করে দেবে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ছবি তুলবেন প্রধানমন্ত্রী
তবে কীভাবে এবং কবে থেকে এই রপ্তানির সুযোগ শুরু হবে তা এখনও নির্দিষ্ট নয়। ভারতের শুল্ক দফতর এ ধরনের একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতি বছর ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হলেও রেলপথ ব্যবহার করেই শুধু ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয় শুধু সড়কপথে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। তখন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশে পণ্য ও কাঁচামাল রপ্তানি করা হতো।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলরকে হত্যার হুমকি
কারণ রেলপথ ব্যবহার করে লোকবল কম ব্যবহার করতে হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে যায়।কিন্তু বাংলাদেশে পণ্য খালাসের পর কন্টেইনারগুলো খালি অবস্থায় ফেরত চলে যায়।
সে সময় থেকে ভারতের মতো বাংলাদেশ থেকেও রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির আলোচনা শুরু হয়। রেল মন্ত্রণালয় থেকেও এরকম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে যে বৈঠক হয়, সেখানে ভারতের মতো বাংলাদেশ থেকেও রেল ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব করা হয়।
২০২০ সালের জুলাই থেকে বেনাপোল-পেট্রোপোল দিয়ে কন্টেইনার রেল সার্ভিস শুরু করে ভারতের রেল বিভাগ। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেইনার স্বল্পতার কারণে ভারতের মতো বাংলাদেশ থেকে সেদেশে কন্টেইনারে পণ্য পাঠানো যায়নি।
মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে ওই বৈঠকের আগে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, ভারতের খালি যাওয়া কন্টেইনারগুলোয় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু এজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া সহজেই যাতে খালি কন্টেইনারে ভারতে পণ্য রপ্তানি করা যায়, সেজন্য প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তারা কোনো চিঠি পাননি।
আরও পড়ুন: একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
তবে এ বিষয়ে গত ১৭ মে একটি আদেশ জারি করেছে ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।
এছাড়া ভারতের রপ্তানি করা ফিরতি কন্টেইনার ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। ভারত থেকে রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করার পর কন্টেইনারগুলো আবার খালি অবস্থায় ভারতে ফেরত যায়। সেসব কন্টেইনারে করেই বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি করার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
ভারতের শুল্ক দফতর জানিয়েছে, পণ্যবাহী কন্টেইনারগুলোর ব্যবস্থাপনায় থাকবে কন্টেইনার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। পেট্রাপোল বা গেদে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের আগে ভারতের যেকোনো অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে (আইসিডি) থেমে শুল্ক কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আশা করছেন যে, এভাবে রেলপথে পণ্য রপ্তানির সুযোগ চালু হলে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল- পেট্রাপোল, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও বিরল-রাধিকাপুর পথে রেল চলাচল করে। ভারতীয় পণ্য আমদানি সবচেয়ে বেশি হয় মূলত বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে। তবে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয় মূলত সড়ক পথে।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, খুব তাড়াতাড়ি রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
রেলে পণ্য পরিবহন করা গেলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পণ্য রপ্তানির খরচ কমে যাবে। ট্রাকে করে পাঠাতে এখন যে খরচ হয়, রেলে তার চেয়ে অনেক কম লাগবে। পাশাপাশি ভারতেরও লাভ হবে। তাদের কন্টেইনারগুলো খালি যায়, তখন এগুলো তারা ভাড়া দিতে পারবে। ফলে ভারতীয় রেলওয়েরও লাভ হবে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে তৈরি পোশাক, পাট ও পাট সুতা, হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে পণ্য পাঠাতে পারলে ভারতীয় রেলওয়ের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে, ফলে এ নিয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে।
পাশাপাশি ভারতে রেল ব্যবহার করে পণ্য পাঠানো গেলে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
কিন্তু কন্টেইনারে পণ্য রপ্তানি করার সময় কাস্টমস কীভাবে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সান নিউজ/এনকে