নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারের মোংডু-আকিয়াব বন্দরে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় রোববার (৫ জুলাই) থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে সেখান থেকে কোনও বাণিজ্যিক ট্রলার আসবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে শনিবার (৪ জুলাই) টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে একটি পণ্যের চালান গেছে মিয়ানমারে।
মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘সে দেশের সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নিশ্চিত করেছেন রোববার থেকে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার সেখান থেকে ছাড়বে না। সেখানে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় সেই দেশের কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কত দিন এই নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে সেটি বলা হয়নি।'
তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনও ধরনের পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি। শুধু মোংডু থেকে শুক্রবার একটি ট্রলার আসে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকলে বাজারে মালামাল সংকট ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দর জেটি ঘাটে গেলে মিয়ানমারে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার চোখে পড়েনি। বন্দর ও জেটি ছিল প্রায় খালি। তবে ছোট পণ্যবাহী একটি ট্রলার থেকে বেশ কিছু শ্রমিক মালামাল আনলোড করছিলেন। এসব পণ্য শুক্রবার বিকালে মোংডু থেকে টেকনাফের আট ব্যবসায়ীর কাছে আসে। সেখানে শুঁটকি, আদা, সুপারিসহ প্রায় দেড়শ’ টন বিভিন্ন মালামাল ছিল।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফই হলো মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানির একমাত্র স্থলবন্দর। টেকনাফ স্থলবন্দর হলেও মূলত নদীপথ ব্যবহার করেই এই পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়। এটি একটি আমদানিনির্ভর স্থলবন্দর। মিয়ানমার থেকে কাঠ, চাল, মাছ, শুঁটকি, আদা, হলুদ, আচার, তেঁতুল, চকলেট, মসলা, মৌসুমি ফল আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বেশি যায় প্লাস্টিক পণ্য। এছাড়া সীমিত পরিসরে তৈরি পোশাক, সিমেন্ট এবং ওষুধও রফতানি হয়। মিয়ানমারের মোংডু ও আকিয়াব থেকেই মূলত পণ্য আসে।
স্থলবন্দরের নুরু মাঝি জানান, গত ২৫ জুন মিয়ানমার আকিয়াব বন্দরে কয়েকজন মাঝিমাল্লার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপরই আকিয়াব থেকে কোনও পণ্যের চালান আসেনি টেকনাফ স্থলবন্দরে। শনিবার মোংডু থেকেও কোনও পণ্যবাহী ট্রলারও আসেনি। তবে একই দিন সকালে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রলার রওনা দিয়েছে মিয়ানমারের উদ্দেশে।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে আকিয়াব বন্দর থেকে কোনও ধরনের পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি। তবে গত শুক্রবার মোংডু থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রলার এসেছে। ব্যবসায়ীর কাছ শুনেছি সেখান থেকেও রোববার থেকে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার আসবে না। তবে বন্দরের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এখান থেকে শনিবার একটি পণ্যবাহী ট্রলার মিয়ানমারে গেছে।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সোহেল আহমদ জানান, টেকনাফ দিয়েই মূলত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য চলে। এখন করোনার কারণে মিয়ানমার থেকে মালামাল আসা অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘মোংডুর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন রোববার থেকে তারা কোনও মালামাল পাঠাতে পারবেন না। কারণ সেখানে করোনা রোগী পাওয়ায় লকডাউন চলছে।’
আমদানিকারক যদু চন্দ্র দাশ জানান, কিনে রাখা ৩শ’ বস্তা আদা আকিয়াব বন্দরে রয়েছে। এগুলো আনা যাচ্ছে না। সেখানে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণে বন্দর লকডাউন চলছে। এই লকডাউন ১৪ দিন পর খোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে মিয়ানমার থেকে পণ্য না আসার ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই।’
সান নিউজ/ আরএইচ