নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে ক্রেতাদের জন্য এ সপ্তাহটি বেশ স্বস্তির। এ সপ্তাহে কোনও পণ্যের দামও বাড়েনি। বরং কমেছে চালসহ অন্তত ১২টি পণ্যের দাম।
কোরবানির ঈদ আসতে আর একমাসও বাকি নেই। এমন সময়ে মসলা জাতীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। ক্রেতারা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম তাদের নাগালের বাইরে থাকলেও নতুন করে কোনও পণ্যের দামই বাড়েনি। পণ্যের দাম না বাড়াকে করোনা মহামারিকালে বড় সান্ত্বনা বলে মনে করছেন অনেকে।
পুরনো ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া ওরফে কামাল মোল্লা বলেন, ‘বাজারের পরিবেশ অনেকটা শান্ত। সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো— নতুন করে কোনও পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে যেসব জিনিসের দাম আগে থেকেই বাড়তি, সেই সব পণ্যের দাম আরও কমে আসা জরুরি।’
এদিকে অন্যান্য বছর কোরবানির একমাস আগে থেকেই মসলা জাতীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসলেও বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
সেগুন বাগিচা এলাকার ব্যবসায়ী রহমত আকন্দ বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। অথচ কোরবানির আর একমাসও বাকি নেই। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কারণ, চাহিদা আগের চেয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলা জাতীয় সব পণ্যের দামই কমেছে। ৩২০০ টাকা কেজি দরের এলাচ বিক্রি হচ্ছে এখন ২৮০০ টাকায়। ১১০ টাকা কেজি দরের দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ৯০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। ৪০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। দেশি আদার কেজি নেমেছে ১০০ টাকায়। আমদানি করা আদা কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহে এই আদা বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি। হলুদের কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ১৮০ টাকা কেজি দরের হলুদ পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়। জিরার কেজিতে কমেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া জিরা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকারও কম দামে। শুধু তাই নয়, ৩১০ টাকাতেও এককেজি জিরা মিলছে। খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে কমেছে ২ টাকা। এছাড়াও দাম কমার তালিকায় রয়েছে— চাল, আলু, ব্রয়লার মুরগি। গত তিন সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা ডিমের দামও নতুন করে আর বাড়েনি।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্য বলছে, এই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি কমেছে হলুদ, জিরা, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে হলুদের দাম কমেছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিরার দাম কমেছে ১২ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম কমেছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম কমেছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারি বাজারেও জিনিসপত্রের দাম কমছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে মাছের দাম। সব ধরনের মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
শুক্রবার (৩ জুলাই) রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা প্রতিকেজি। তবে চিকন চাল কেজিতে কমেছে দুই টাকা। ৬৫ টাকা কেজি নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা করে।
ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহের মতোই ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায়। সবজির দামও ছিল আগের সপ্তাহের মতোই। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গাজরের কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ৬০ টাকা কেজি পাকা টমেটো ও বরবটি। চিচিঙ্গা, পেঁপে, পটল, করলা, ঝিঙা, কচুর লতি, কচুর মুখী ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা।
সান নিউজ/ আরএইচ