সান নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ব মহামারি করোনা শংকটে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে বিদেশি বিনিয়োগকে আরো উৎসাহিত করতে নীতিমালা পুনবিন্যাস করতে যাচ্ছে সরকার।
এ নীতিমালায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও, কর অব্যাহতিসহ সহজ শর্তে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।
সরকারী নীতি নির্ধারণী বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর ও জাপানের মত কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী চীন থেকে অন্যদেশে ব্যবসা স্থানান্তরের বিষয়ে ভাবছেন। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা এই সুযোগ কাজে লাগানোর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো নিয়ে গবেষণা ও পরিকল্পনা করছেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা করোনার সময় এবং করোনা উত্তর সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদ্যমান প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি নতুন প্রস্তাবনা আনার সুপারিশমালা তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আরো বেশি প্রণোদনার সুযোগ দেয়া উচিত, কারণ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিযোগী দেশ যেমন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া আরো বেশি সুবিধা দিয়েছে। এরইমধ্যে তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)’র মাধ্যমে কিছু বড় বাজার ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।
বেজা নতুন কিছু প্রণোদনার প্রস্তাবনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য গত এপ্রিলের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে জি টু জি (সরকারের সঙ্গে সরকার) চুক্তির ভিত্তিতে অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরে আগ্রহীদের সম্পূর্ণ কর্পোরেট কর মওকুফ করাসহ সব যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সব বিদেশি বিনিয়োগকারী রফতানিমুখী উৎপাদক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দশবছরের শতভাগ কর্পোরেট কর মওকুফের প্রস্তাব দিয়ে, দেশি বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি ইজারা ও বন্ডেড গুদাম সুবিধার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আরো প্রস্তাব করা হয়েছে, যদি কোন কোম্পানি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে অথবা ৩০০ জনের কর্মসংস্থান করে তাহলে ওই কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সাত বছরের জন্য কর সুবিধা পেতে পারে।
বিভিন্ন দেশের ভ্যাটের হার কম থাকায় প্রতিবেদনে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভিয়েতনামে এই হার সাত শতাংশ এবং থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় ১০ শতাংশ।
বেজা প্রধান বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বাংলাদেশ ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইন সেবা প্রদান করায় অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিযোগীদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এটি বর্তমান সরকারের জন্য একটি অন্যতম মাইলফলক।
পবন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ১৭ টি বিভিন্ন সেবা দিচ্ছি যেখানে ভারত অনলাইনে পাঁচ থেকে ছয়টি এবং ভিয়েতনাম নয়টি সেবা অনলাইনের মাধ্যমে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বেজা অনলাইনের মাধ্যমে শতভাগ সেবা প্রদানের পরিকল্পনা করছে। এতে যেকোনো বিনিয়োগকারী এখানকার কোনো অফিসে না এসেও সব ধরনের সেবা পাবেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী নতুন দেশগুলো আকর্ষণ করার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ব্রোশিওর ও হ্যান্ডবুক হালনাগাদ করা হচ্ছে।
বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড আরো সহজ করার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ২০২০ সালে ব্যবসা সহজীকরণের র্যাং কিং ‘ডুয়িং বিজনেস’ এ ১৯০টি অর্থনীতির মধ্যে ১৬৮তম স্থান অর্জন করেছে- যা আফগানিস্তানকে বাদ দিলে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের এফডিআই ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। একই সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’র এফডিআই শেয়ারও ০ দশমিক ৯২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে, জুলাই ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত নেট এফডিআই প্রবাহ ছিলো ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চেয়ে চার শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন ছিলো সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। তাদের নেট এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তারপরের অবস্থানে ছিল নেদারল্যান্ডসের ৮০২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ।
সান নিউজ/সালি