নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির চরম সংকটে গত বছর প্রবাসী আয়ের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও চলতি বছরে তা কমতে শুরু করেছে।
প্রবাসীরা বৈধ পথে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭ দিনে ৬৮ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে) । অর্থাৎ পূর্বের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
বিগত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১২৭ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। যার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে, অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন।
ফলে করোনা পরিস্থিতির ওই সময় অবৈধ রাস্তাগুলো বন্ধ ছিল বিধায় সবাই ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়েছেন। তাই গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশি ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন বর্হিবিশ্বের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের বাইরে চাহিদা বেড়েছে।
এ ছাড়াও জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। ফলে চলতি অর্থবছরে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, চলতি ফেব্রুয়ারির ১৭ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ৩২ লাথ মার্কিন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৩ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ লাখ মার্কিন ডলার।
দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ১ কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলার।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ১৮ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৯ কোটি ৫৬ লাথ মার্কিন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছিল দুই কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এসেছে।
অপরদিকে গত বছরের একই মাসে ১৮ দিনে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের বছরের জানুয়ারির চেয়ে ২৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বা ১৩ শতাংশ কম।
এছাড়াও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।
রেমিট্যান্সের এ অংক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৬ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম। এর আগের অর্থবছরের একই সময় এসেছিল এক হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ,
আগস্টে ১৮১ কোটি,
সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ,
অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ,
নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ,
ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি এবং
সর্বশেষ জানুয়ারিতে এসেছে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
অর্থবছরভিত্তিক প্রবাসী আয়
২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উর্ধ্বগতি ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তার আগের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ সুদান সফরে সেনাপ্রধান
এছাড়াও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার,
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার,
২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং
২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।
সান নিউজ/ এইচএন