নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত সেনা কল্যাণ সংস্থা সেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরে স্থায়ীভাবে কর মওকুফের জন্য আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটি তার অধিনে থাকা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ীভাবে কর মওকুফ চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ বিভাগের কাছে এই চিঠি দিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, সেনা কল্যাণ সংস্থার অধীনে ট্রাভেল এজেন্সি, ইলেকট্রনিক পণ্য, সিমেন্ট কারখানা এবং আইসক্রিম ফ্যাক্টরিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
এছাড়াও এর ট্রাস্টের অধীনে ‘রেডিসন ব্লু’ নামে একটি ফাইভ স্টার হোটেলও পরিচালিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে লেখা চিঠিতে কর মওকুফের কথা জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ‘স্থায়ী কর মওকুফের জন্য সেনা কল্যাণ সংস্থার প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআর থেকে সেনা কল্যাণ সংস্থার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের পরিমাণ খতিয়ে দেখছে।’
চিঠিতে জানানো হয়েছে, সেনা কল্যাণ সংস্থার আয় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও তাদের নির্ভরশীলদের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়, তাদের নির্ভরশীলদের জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় বহন করা হয়, সদস্যদের বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়।
১৯৭১-২০০২ সাল পর্যন্ত সেনা কল্যাণ সংস্থার এসব কল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এর আওতাধীন সব প্রকল্পে আয়কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আয়কর ছাড়ের সুবিধাটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, ২০০৩ সালের জুলাই মাসের বিভিন্ন এসআরও-এর মাধ্যমে, তৎকালীন সরকার ঢাকা ও খুলনায় সেনা কল্যাণ সংস্থা ভবন ছাড়া এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আয়কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়।
ফলে সেনা কল্যাণ সংস্থার পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর, সংস্থাটির সব শিল্প কারখানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
এছাড়াও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর্থিক সংকটের কারণে ব্যাংক ঋণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এর কল্যাণমুখী কার্যক্রম কমেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়েছে, সেনা কল্যাণ সংস্থা এ পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীদের কল্যাণে ৪৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে এসআরও দ্বারা প্রণীত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী আয়কর দেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। একইভাবে, সেনা কল্যাণ সংস্থাকেও এই ধরনের ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেনা কল্যাণ সংস্থা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহায়তায় সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান ফৌজি ফাউন্ডেশন নামে যাত্রা শুরু করেছিল সংস্থাটি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে সেনা কল্যান সংস্থা (এসকেএফ) রাখা হয়। এর সদর দপ্তর ঢাকার মতিঝিলে ২৩ তলা সেনা কল্যাণ ভবনে।
সেনা কল্যান সংস্থার অধীনে রয়েছে- স্যাভয় আইসক্রিম, এনার্জি সেভিংস ল্যাম্প, হাবিব ফ্যান, সিটিজেন ফ্রিজ, এলিফ্যান্ট সিমেন্ট, টেলিভিশন এবং ট্রান্সফরমার ফ্যাক্টরি।
আরও পড়ুন: ৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল
২০১৫ সালে সেনা কল্যাণ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সিও চালু করা হয়েছে। এছাড়াও সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে একটি পেট্রোলিয়াম গ্যাস প্লান্টও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট জনশক্তি রপ্তানির জন্য সৌদি আরবের বাওয়ানি গ্রুপের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল।
সান নিউজ/ এইচএন