নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশের ই-কমার্স জগতের আলোচিত-সমালোচিত প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের ৭ টি গাড়ি খোলা নিলামে ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
গাড়িগুলোর মধ্যে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের রেঞ্জ রোভার গাড়িটি বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকায়। রাসেলের দামি গাড়িটি কিনেছেন ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী।
আদালতের নির্দেশে গঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা পরিষদ বোর্ড আয়োজিত নিলামে প্রতিষ্ঠানটির ৭ টি গাড়ি বিক্রি করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ( ১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ১৪ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ির ভিক্টোরিয়া কনভেনশন সেন্টারে নিলাম শেষে ইভ্যালির পরিচালনা পরিষদ বোর্ডের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ই অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাইকোর্ট। এ কমিটি নিলাম প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন।
ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের রেঞ্জ রোভার গাড়িটি দিয়ে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ১ কোটি ৬০ লাখ ভিত্তিমূল্যের এই গাড়িটি বিক্রি হয় ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ২০২০ সালের রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি এটি।
নিলাম শর্ত অনুযায়ী, ২০ শতাংশ নগদ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বাকি টাকা ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সেই হিসেবে গাড়ি ক্রয়কারী হাবিবুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে ৪০ লাখ টাকা নগদ অর্থ পরিশোধ করেছেন।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নিলাম শেষে জানান, অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নিলামের মাধ্যমে গাড়িগুলো বিক্রি হয়েছে। আদালত আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে ইভ্যালির মূলধন বাড়ানোর জন্য, যাতে গ্রাহকদের টাকা শোধ করা যায়।
তিনি আরও জানান, আমরা গাড়ির যে মূল্য পেয়েছি তাতে আমরা খুশি। এই টাকা ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে কাজে লাগানো হবে।
বিচারপতি জানান, নিলামে ৭ টি গাড়ি মোট ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। নিলামে রেঞ্জ রোভার গাড়িটির জন্য ১৫ জন দর হাঁকান। এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়িটি কিনে নেন।
নিলামের শুরুতে গাড়িটির ন্যূনতম নিলাম ভিত্তিমূল্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা হয়। রেঞ্জ রোভার ছিল সবচেয়ে দামি গাড়ি।
তিনি বলেন, টাকাগুলো ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে যাবে। সব পাওনাদারদের জন্য এই টাকাগুলো। পুঁজি বাড়লে পাওনাদারদের যথাসম্ভব পাওনাগুলো দেয়া যাবে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির কাছে পণ্য সরবরাহকারী ও কয়েক লাখ ক্রেতার পাওনা রয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি।
ইভ্যালির আরও কিছু গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে গাড়িগুলো পাওয়া গেলে সেগুলোও নিলামে তোলা হতে পারে।
নিলাম তালিকায় থাকা ২য় গাড়িটি টয়োটা ব্র্যান্ডের (ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪১২৭)। গাড়িটির ভিত্তি মূল্য ছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিলামে এটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে নেন রিপন ইসলাম (তারা) নামের এক ব্যক্তি।
টয়োটা ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ি টয়োটা বিএইচআর হাইব্রিড (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৭৫১২) ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনে নেন প্রশান্ত ভৌমিক। তিনি ১৫ লাখ টাকায় টয়োটা এক্সিও ব্র্যান্ডের একটি গাড়িও কেনেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন হওয়া ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪৬২১ গাড়িটির ভিত্তি মূল্য ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একই ধরন ও একই ভিত্তি মূল্যের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪৬২০) ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেন আবুল হাসনাত রাসেল।
হোন্ডা ব্র্যান্ডের হোন্ডা ভেসেল (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৯৬১৫) গাড়িটি কিনেছেন কানিজ ফাতেমা। ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়িটি তিনি কিনেছেন ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এটির ভিত্তি মূল্য ছিল ১৬ লাখ টাকা।
সবশেষে নিলামে ওঠা টয়োটার একটি মাইক্রোবাস বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২০ সালে রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়িটির ভিত্তিমূল্য ছিল ১২ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রো-চ-৫৬-৪৮২২ গাড়িটি কিনে নেন রিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী।
নিলামের ডাক পরিচালনা করেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান। ওই সময় ইভ্যালির এমডি ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ইভ্যালির আরও ৪টি গাড়ির সন্ধান পেয়েছে ইভ্যালি পরিচালনায় গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি। পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, গাড়ি ৪ টি রাসেল তাদের দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ভারতে হিজাব বিতর্ক, চটেছে পাকিস্তান
যাদের কাছে গাড়িগুলো আছে, তাদের নাম-ঠিকানাও পাওয়া গেছে। গাড়ি আটকে রাখা আইনের দৃষ্টিতে চুরি।
আগামী রোববারের মধ্যে তারা গাড়িগুলো ফেরত না দিলে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারও করা হবে।
সান নিউজ/ এইচএন