আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে জনসন অ্যান্ড জনসনের উৎপাদিত ট্যালক বেবি পাউডার উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধে এবার একজুট হয়েছেন কোম্পনিটির অংশীদাররা।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বর্তমানে ট্যালক বেবি পাউডারের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ। জনসন অ্যান্ড জনসনের অংশীদাররা চান, বৈশ্বিকভাবেই যেন নিষিদ্ধ হয় এই পণ্যটি।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে ব্রিটেনের জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের লন্ডনভিত্তিক সংস্থা টিউলিপশেয়ার সম্প্রতি একটি ভোটের আয়োজন করেছিল। যে ইস্যুতে এই ভোটের আয়োজন হয়েছিল, তা হলো জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালক বেবি পাউডারের উৎপাদন ও বিপণন বৈশ্বিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কিনা।
সেখানে অধিকাংশ অংশীদার পণ্যটি নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। পাশপাশি, বেবি ট্যালক পাউডারের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে উদ্যোগ না নিলে কোম্পানি থেকে শেয়ার প্রত্যাহার করে নেবেন বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: তুষারধসে ৯ আরোহীর মৃত্যু
দ্য গার্ডিয়ানকে টিউলিপশেয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোটের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিটিতে (এসইসি) পাঠানো হবে; পাশাপাশি সুপারিশ করা হবে চলতি বছর এপ্রিলে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির পরিচালনা কমিটির সঙ্গে এসইসির যে বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানে যেন এ বিষয়টি তোলা হয়।
জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম বেবি পাউডারের বিরুদ্ধে ক্যান্সার সংক্রমণের মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ অবশ্য বহুদিনের। বিশ্বের বিভিন্ন আদালতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বর্তমানে এই অভিযোগে ৩৪ হাজারেরও বেশি মামলা চলছে।
অধিকাংশ মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যে করা এক মামলায় ২২ জন নারী জানিয়েছেন, এই পণ্যটির ব্যবহারের পর থেকে জরায়ুর ক্যান্সারের উপসর্গে ভুগছেন তারা।
আদালত মামলার রায় বাদিপক্ষের অনুকূলে দেওয়ায় ওই ২২ নারীকে ২০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনকে।
আরও পড়ুন: বাবুল সুপ্রিয়র ওপর হামলা
ট্যালক এক প্রকার খনিজ পদার্থ। বিশ্বের প্রাপ্ত খনিজ পদার্থসমূহের এটি সবচেয়ে কোমল। বিশ্বজুড়ে প্রসাধন, কাগজ, প্লাস্টিক ও ওষুধ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় এই খনিজটি। বিশুদ্ধ ট্যালক ক্ষতিকর না হলেও দুষণযুক্ত ট্যালক ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টি করতে পারে মানবদেহের জন্য।
এ কারণে ট্যালকে ক্ষতিকর অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি শনাক্তের খবর প্রচারিত হওয়ার পর ২০২০ সালেই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালক বেবি পাওডারের বিপণন নিষিদ্ধ করে।
তবে টিউলিপশেয়ারের সাম্প্রতিক ভোটের পর জনসন অ্যান্ড জনসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেবি পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতি থাকার তথ্য ‘সঠিক নয়’ এবং কোম্পনির উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে।
কোম্পানির এক মুখপাত্র দ্য গার্ডিয়ানকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের যে কোনো পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে কোম্পানির নিজস্ব বোর্ডের অধীনে কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাছাড়া কেবল কোম্পানির বোর্ড নয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞানাগারের সবুজ সংকেত পাওয়া ট্যালক আমরা ব্যবহার করি।’
‘আমরা মনে করি, পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অ্যাসবেস্টস থাকার তথ্য সঠিক নয় এবং আমাদের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাওডারের ট্যালকে কারসিনোজেনিক ক্রিসোটাইল ফাইবার বা আঁশের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটি এক প্রকার ক্ষতিকর অ্যাসবেস্টস (সিলিকেট জাতীয় খনিজ) যা মানবদেহে ক্যান্সারের সম্ভবনা তৈরি করে।
সান নিউজ/এনকে