বাণিজ্য

সিগারেটের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে চাহিদা কমবে ৭.১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে সিগারেটের চাহিদা ধনীদের থেকে অধিক হারে কমে আসে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, সিগারেটের দাম যদি ১০% বৃদ্ধি পায়, স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে এর চাহিদা ৯% কমে আসে। অন্যদিকে, একই হারে দাম বৃদ্ধির ফলে ধনীদের সিগারেটের চাহিদা মাত্র ৪% কমে আসে। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে সমপরিমাণ দাম বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে ধূমপায়ীর হার গড়ে ৭.১ শতাংশ কমে আসবে। আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যোবাকোনোমিক্সের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায় এই তথ্যগুলো উঠে আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (GATS) ২০০৯ এবং ২০১৭ ব্যবহার করে বাংলাদেশে সিগারেটের চাহিদা পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় আর্ক ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত দুটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষক এস এম আব্দুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষক মো. নাজমুল হোসেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান এবং সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি আফেয়ার্সের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করছে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহারের পরিমাণ বেশি। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। তবে অতি উচ্চবিত্তের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেন নারীরা। যাদের ৫৮.৭০ শতাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে এর ব্যবহারের হারও কমে আসে এটা বিশ্বজুড়ে পরীক্ষিত। তবে সুনির্দিষ্টভাবে সিগারেটের দাম বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার কমলেও আনুপাতিক হারে তা বৃদ্ধির তুলনায় কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত হারে সিগারেটের ব্যবহার কমাতে সিগারেটের ওপর উল্লেখ্যযোগ্য হারে কর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য অতিদ্রুত সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারি অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, দেশে তামাকের ওপর বহুস্তরভিত্তিক জটিল কর ব্যবস্থা থাকায় বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মাত্রায় কর আরোপ করা হয়। আর প্রত্যেক স্তরের সিগারেটে তুলনামূলক ভিত্তিমূল্য কম হওয়ায় এই কর ব্যবস্থায় ধূমপান নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও, দেশে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম এবং করের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো নিম্নস্তরের সিগারেটের বাজার বিস্তৃত করছে। যার ফলে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আয় হারাচ্ছে। এই গবেষণায় উঠে এসেছে সিগারেট কোম্পানিগুলো বাজারে নিম্নস্তরে নতুন সিগারেটের ব্র্যান্ড চালুর ফলে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২৭৩.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হারিয়েছে। এই গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, যদি সরকার নিম্নস্তরের সিগারেটের ভিত্তি দাম ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা করতো এবং এই স্তরে করের হার ৫৫% এর পরিবর্তে ৬৫% করা হতো তাহলে সরকার ১৯৫৮.৪ কোটি টাক অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করতে পারতো।

অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে এর ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে এবং একই সাথে সিগারেটের খুচরা বিক্রি বন্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান। যদি ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করলে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহারকারী কমে আসে তাহলে সেই অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে দ্রুত একটি যুগোপযোগী জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে।

ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের তামাক কোম্পানিতে শেয়ার থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই মুহুর্তে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত দেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি মনে করেন উপস্থাপিত দুটি গবেষণায় সিগারেটের চাহিদা কমানো এবং সিগারেট থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তামাক কর নীতিতে কি কি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে। কর নির্ধারণের সময়ে বিষয়গুলো অনুসরণ করলে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি তামাকের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কমে আসবে।

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কর বৃদ্ধি সবচেয়ে কর্যকরী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কর উল্লেযোগ্য হারে বৃদ্ধি না হওয়ার অন্যতম কারণ তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। তিনি মনে করেন উপস্থাপিত দুটি গবেষণার ফলাফল কার্যকরী ভাবে সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।

সিটিএফকের লিড এডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান গবেষণা দলকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি গবেষণা পরিচালনার জন্য অভিনন্দন জানান এবং আশা করেন গবেষণায় উঠে আসা ফলাফল বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করছে এবং সরকারের নানা নীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।

তিনি বলেন, এই সুযোগটা তারা কীভাবে পায় সেটা আমরা অনেকেই জানি। তিনি মনে করেন বর্তমান সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। আমরা চাই সরকার আইন করে তামাক কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। একইসঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনগুলোতে প্রাসঙ্গিক পরিবর্তন করে তা বাস্তবায়ন করবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিশেষজ্ঞগণ, জনস্বাস্থ্যবিদ, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং গবেষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

সান নিউজ/এনএএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত...

অটোরিকশার বিষয়ে যে বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোরিকশা সম...

পেপার মিলে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ ১১

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি পেপার মিলে অগ্...

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখ...

আমরা সব লিপিবদ্ধ করে যাবো

বিনোদন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা