নিজস্ব প্রতিবেদক: কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাতের ঋণ বিতরণ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ঋণের বাইরেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যেন গতি ফিরে এসেছে নিয়মিত এসএমই ঋণ বিতরণে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিডের কারণে মাঝখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগ একেবারেই কমে যায়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ফের গতি বাড়ছে ক্ষুদ্র ঋণ বতরণে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা, যা এর আগের প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের তুলনায় ২৮৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সিএমএসএমই খাতে ৪১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।
সব মিলে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এসএমই ঋণ বিতরণ হয় এক লাখ ২৮ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। তবে ইতিপূর্বে বিতরণ করা সব ঋণ মিলিয়ে এসএমই ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৭২৬টি গ্রাহকের অনুকূলে এ ঋণ দেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লি এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেয়া হয় ৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকার ঋণ। জামানতবিহীন ঋণ ছিল ছয় হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কুটির (কটেজ) প্রতিষ্ঠানে ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। মাইক্রো খাতের প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র শিল্পে ২৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা এবং মাঝারি শিল্প খাতে ১১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো।
বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে ম্যানুফাকচারিং খাতে গেছে ১৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ঋণ। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে গেছে ৯ হাজার আট কোটি টাকা এবং ব্যবসা উপ-খাতের প্রতিষ্ঠানে ১৭ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সিএমএসএমই খাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ২২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকার ঋণ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিতরণ করে তিন হাজার ২৬১ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংক বিতরণ করে ৮৩৯ কোটি টাকা। ইসলামিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ১২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। সব মিলে ব্যাংক খাত থেকে সিএসমএসএমই খাতে ঋণ যায় ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এছাড়া লিজিং প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করে এক হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।
নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কভিডের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয় সিএমএসএমই খাতে। গত জুলাই থেকে প্রণোদনার দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার, বাকিটা গ্রাহক পরিশোধ করবে।
সান নিউজ/এনএএম