নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড)। আর এখানে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৩৮টি দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডগুলোতে। বিনিয়োগ করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, শ্রীলংকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, ফ্রান্স।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখা এসব ইপিজেডে বিনিয়োগ রয়েছে চীনের ৫৬ জন, হংকংয়ের ২৮ জন, জাপানের ৩১ জন, তাইওয়ানের ২৫ জন এবং ভারতের ২০ জন বিনিয়োগকারীর। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য সবচেয়ে এগিয়ে আছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির মোট ৭১ জন বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ ঢেলেছেন বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে।
তাদের মধ্যে একটি হল- দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বিখ্যাত পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিডো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি।
নতুন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে এবং সম্প্রতি অধিগ্রহণ করা একটি ফার্ম সংস্কার করতে আদমজী ইপিজেডে ৩৬.১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানিটি মোটরসাইকেল সেফটি জ্যাকেট, লেদার জ্যাকেট এবং ফাইবার জ্যাকেটসহ উচ্চ মূল্যের পণ্য তৈরি করবে।
কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক জোসেফ আহন গণমাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশে এই সেক্টরে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক রয়েছে।”
কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. জহিরুল ইসলাম।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, "আমি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভ্যস্ত। ইপিজেডে আমার প্রায় ১২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা। আমার এ অভিজ্ঞাতা আমি কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডে প্রয়োগ করতে পারবো। আসলে ইপিজেড সুযোগ করে দিয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার।"
ইপিজেডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কর অবকাশ, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানি, লভ্যাংশ কর থেকে ছাড়, জিএসপি সুবিধা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, “অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
তিনি আরও বলেন, "কর্মপরিবেশ ভালো থাকায় ইপিজেড এলাকায় উদ্যোক্তাদের জমি চাহিদা রয়েছে। তাই দ্রুত নতুন ইপিজেড যেন ডেভলপ করা হয়। যেখানে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সুযোগ পাবে।"
বাংলাদেশের ইপিজেডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত:
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত সর্বমোট ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, ইপিজেড রয়েছে যা ২৩০৭ একর জায়গায় উপর অবস্থিত ।
১. চট্টগ্রাম ইপিজেড: আয়তন ৪৫৩ একর, অবস্থান: হালিশহর, চট্টগ্রাম। কার্যক্রাম শুরু ১৯৮৩ সালে।
২. ঢাকা ইপিজেড: আয়তন ৩৫৩ একর, অবস্থান: সাভার, কার্যক্রম শুরু ১৯৯৩ সালে।
৩. মোংলা ইপিজেড: আয়তন ৪৬০ একর, অবস্থান: মোংলা, বাগেরহাট, কার্যক্রম শুরু ১৯৯৮সালে।
৪. কুমিল্লা ইপিজেড: আয়তন ২৬৭ একর, অবস্থান: বিমানবন্দর, কুমিল্লা, কার্যক্রম শুরু ২০০০ সালে।
৫. উত্তরা ইপিজেড: আয়তন ২৬৫ একর, অবস্থান: সঙ্গলসী সদর, নীলফামারী, কার্যক্রম শুরু ১৯৯৯ সালে।
৬. ঈশ্বরদী ইপিজেড: আয়তন ৩০৯ একর, অবস্থান: পাকশি, পাবনা, কার্যক্রম শুরু ১৯৯৮ সালে।
৭. আদমজী ইপিজেড: আয়তন ২৪৫ একর, অবস্থান: নারায়ণগঞ্জ, কার্যক্রম শুরু ২০০৬ সালে।
৮. কর্ণফুলী ইপিজেড: আয়তন ২২২ একর, অবস্থান: পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম, কার্যক্রম শুরু ২০০৬ সালে।
সাননিউজ/ডি