নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) সাদা করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে তিনটি খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও এবার শিল্পায়ন, পুঁজিবাজার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই কর দিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে। এ টাকার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, মহামারিকালীন এ সংকটে বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চায় সরকার। এই লক্ষ্যে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ। ফলে আগামী ২ থেকে ৫ বছর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে আসন্ন বাজেটে।
এই অর্থের উৎস নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো প্রশ্ন করবে না, এমন আভাসও পাওয়া গেছে।
গত পাঁচ বছর ধরে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগকারীরা আবাসন খাতে বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে সাদা করতে সক্ষম হয়েছেন, যা নিয়মিত করদাতাদের জন্য ১০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকে।
তবে তহবিলের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করার ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার এখন এক্ষেত্রে পুরোপুরি ছাড় দেওয়ার উপায় খুঁজছে এবং সংকটে প্রশ্ন না রেখে বিনিয়োগ বাড়ানোর পথে হাঁটছে।
লকডাউন পরিস্থিতি ও বিক্রয় ভেস্তে যাওয়ার কারণে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অপারেশন গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সরকার এদের কর্পোরেট শুল্ক ২.৫ শতাংশ কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে, যাতে তারা কিছুটা স্বস্তি পায়।
২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা সরকার বাড়িয়ে দিতে পারে। যাতে নিম্ন-আয়ের মানুষেরা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কষ্টকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে।
এবার করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে।
বাজেটে আয়কর স্ল্যাবগুলি পুনরায় বিন্যাস হতে পারে। আয়করের হার এখন ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ রয়েছে। তবে পরের অর্থবছরে এটি ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কাটা হতে পারে।
ইতিমধ্যে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি আবেদনের বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
রাজস্ব আহরণে ব্যাপক নিমগ্নতা এনবিআরকে উদ্বুব্ধ করেছে। তারা সরকারকে অনুরোধ করেছে, পরবর্তী অর্থবছরের জন্য একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে। সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য ৩,০১,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে, যেটা শুরুতে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ৩,৩০,০০০ টাকার চেয়ে কম।
আশা করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরে এনবিআর প্রায় ২,২০,০০০ কোটি টাকা লগ করবে, যা হবে ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ ঘাটতি। করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটবে।
এনবিআরের ধারণা, এই অঙ্ক গত বছরের মোট রাজস্ব সংগ্রহ ২,২৩,৮৯২ কোটি টাকার নিচে নেমে আসবে, যা কিনা অভূতপূর্ব ঘটনা। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো সংগ্রহটি আগের বছরের তুলনায় কম।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমতুল মুনিম গত মাসে অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদারকে একটি চিঠিতে বলেছিলেন, রাজস্ব সংগ্রহ আগামী অর্থবছরে ২,৫০,০০০ কোটি টাকার বেশি হবে না। যেহেতু সংগ্রহটি হ্রাস পাচ্ছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। এটি হবে পরপর নবম বছর যখন এনবিআর সরকার নির্ধারিত প্রকৃত ও সংশোধিত উভয় সংগ্রহ লক্ষ্যই মিস করবে। এটা সরকার নির্ধারণ করে তার সার্বিক আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।
চিঠিতে বলা হয়, ৩,০০,৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরে অর্জন করা অসম্ভব হবে, কারণ দেশীয় ও বহিরাগত চাহিদা, ব্যবসা এবং আয়ের ওপর লকডাউনের প্রভাব দীর্ঘ হয়েছে।
এই অনুমান এমন সময়ে এল, যখন এনবিআরের কর সংগ্রহ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ১ শতাংশের একটু বেশি বেড়ে ১,৭৫,০০০ কোটি টাকায় ঠেকেছে। আর ধীরগতির সংগ্রহটি ছিল এপ্রিল মাসে নেতিবাচক বৃদ্ধির জন্য। এই নেতিবাচক বৃদ্ধি ছিল ঘাতক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সবকিছু বন্ধ করে বাসায় থাকার নির্দেশনার প্রথম মাসের ফল।
এপ্রিলে রাজস্ব আদায় ৫৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে। করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এটা তারই প্রতিফলন।
সান নিউজ/ আরএইচ