নিজস্ব প্রতিবেদক: কাজের ব্যাপ্তি আরো বাড়ানোসহ বিএসটিআইকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে বিএসটিআই এর কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ে বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত "Shared vision for a better world – Standards for SDGs" অর্থাৎ ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে – মান’ র্শীষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এছাড়া বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। এতে অন্যদের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, স্থানীয় কাউন্সিলর, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর/সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিএসটিআই’র কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, মান প্রণয়নে বিশেষজ্ঞগণ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং স্টেকহোল্ডার অংশ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত শিল্পসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিএসটিআইকে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিগত দেড় দশকে আঞ্চলিক অফিস সম্প্রসারণ, জনবল বৃদ্ধি ও ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বাড়ানোসহ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন হলে আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
শিল্পমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্রতি মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, শিল্পায়নের অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে দেশে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বিএসটিআই অধিক হারে আন্তর্জাতিক মানকে জাতীয় মান হিসেবে গ্রহণ করছে। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ সহজতর হবে। দেশে ও বিদেশে ক্রেতার আস্থা অর্জনের জন্য বিশ্বমানের শিল্প অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববাজারে দেশীয় পণ্যের অবাধ প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঁচামাল থেকে শুরু করে ব্যবহারযোগ্য পণ্য (ফিনিশড প্রোডাক্ট) পর্যন্ত সর্বত্র মানের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বিএসটিআই অনেক সুসংগঠিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক জনবল ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনমনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বিএসটিআই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিএসটিআই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ভেজালমুক্ত খাদ্য ও পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ব বাজারে দেশীয় পণ্যের প্রসারে আমাদেরকে শিল্প কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে নির্ধারিত মান বজায় রাখতে হবে। আমদেরকে করোনা ভাইরাসের এই ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা আরও সচল ও বেগবান করতে হবে। সকলকে টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সেবার প্রসার ঘটাতে হবে। মান দিবস পালনের মাধ্যমে দেশের উৎপাদনকারী, আমদানীকারক, বিপণনকারীসহ সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তাসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করছি।
সভাপতির বক্তব্যে বিএসটিআই মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার বলেন, মানসম্পন্ন পণ্য এবং সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিককরণে মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআই’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১০ আঞ্চলিক কার্যালয়সহ নতুন নতুন জেলা কার্যালয় স্থাপন, পণ্য পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকমানের নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যমান ল্যবরেটরিসমূহে নতুন নতুন পণ্য পরীক্ষণ প্যারামিটার সংযুক্তিকরণ, মানচিহ্ন নকল ও অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স প্রদান, পণ্যের হালাল সনদ প্রদান, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাইপূর্বক সনদ প্রদান, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তিনি তুলে ধরেন।
সান নিউজ/এনএএম