নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তিন মাসে ২২ হাজার অভিযোগ পড়েছে। অথচ তিন মাস আগে এ সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজারের মতো। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে আট হাজারের বেশি দাঁড়িয়েছে। এসব অভিযোগের ৯০ শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক। একই সঙ্গে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুন মাসে গ্রাহকেরা অভিযোগ এনেছিলেন ১৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৪১ দাঁড়িয়েছে। অভিযোগের বেশির ভাগই ইভ্যালি ও ই–অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। এসব ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরে অসংখ্য ফেসবুক পেজও রয়েছে।
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লাফিয়ে বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যা। সেপ্টেম্বর শেষে এ অভিযোগের সংখ্যা দেখা যায় প্রায় ২২ হাজার। অথচ তিন মাস আগে এ সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজারের মতো।
জুন পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে ইভ্যালি, দারাজ, সহজ, আজকের ডিল, ফুডপান্ডা, চালডাল, প্রিয়শপ, ফাল্গুনী, অথবা, উবার, পাঠাও, বিক্রয়, নিরাপদ, ই–অরেঞ্জ, রকমারি, ধামাকা শপিং, আদিয়ান মার্ট ও আলেশা মার্ট।
সেপ্টেম্বরে তালিকায় যোগ হয় আরও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম—-মনোহর, দালাল প্লাস, কিউকম, পিকাবু, পাফজি (pafg.com), আলাদিনের প্রদীপ, মীনা ক্লিক, বাবুই, ব্যাকপ্যাক, আলি টু বিডি, সেলমার্ট, গ্যাজেট মার্ট, বিডিটিকেটস, সাবু শপ, আমারি, শপআপ, সিরাজগঞ্জ শপ, কমপ্লেক্স ডটকম, রাজারহাট, বিডিশপ, চাহিদা ইশপ, আনন্দের বাজার ও বুমবুম।
অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মোট অভিযোগ পরেছে প্রায় সাড়ে ৫৬ হাজার। এর মধ্যে শুধু ই–কমার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রায় ২২ হাজার, অর্থাৎ মোট অভিযোগের ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রায় ৯০ শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক। এর মধ্যে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগের ৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল ক্রয়-সংক্রান্ত।
বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের অভিযোগ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নিষ্পপ্তি করতে সময় লাগছে বেশি। জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগের ৮৬ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হার এসে ঠেকে ৫৮ শতাংশে। এ সময় পর্যন্ত মোট অভিযোগের ১২ হাজার ৫৫০টি নিষ্পত্তি হয়।
অভিযোগের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং মালিকদের কাউকে গ্রেফতার করায় এসবের সুরাহা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, বিষয়গুলো আদালতে চলে যাওয়ায় নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। তাই অনেক অভিযোগ ফাইলবন্দী করে রাখা আছে। এখন নিষ্পত্তি করলে অধিদপ্তরের মার্কস বাড়বে। কিন্তু ভোক্তা তাঁর অর্থের কিছুই ফেরত পাবেন না। প্রতিষ্ঠানগুলো খুললে এবং গ্রেফতারকৃত মালিকেরা বের হলে হয়তো একটা সমাধান আসবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দায়ভার সরকার নেবে না। গ্রাহকরা কম মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা কম দামে পণ্য কেনার সময় তো সরকারকে জানায়নি। তাদের (গ্রাহকদের) ক্ষতির দায় সরকার নেবে কেন?
সান নিউজ/এফএআর