সান নিউজ ডেস্ক: প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। এই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র যেখানে কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/ বিক্রয় হয়ে থাকে।
প্রযুক্তির ব্যবহার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসার ধরন যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি গতি পাচ্ছে আর্থিক লেনদেনেও।
তেমনি এই জনপ্রিয়তার সুযোগে একশ্রেণির অসাধু চক্র নানা অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনই একটি মাধ্যম হলো ‘রিং আইডি’। ইঅরেঞ্জ ও ইভ্যালির মতো রিং আইডিতেও বিনিয়োগ করে অনেক গ্রাহক এখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
আয়ের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এবং আইডি খোলার নাম করে রিং আইডি গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কম সময়ে এবং সহজে মুনাফার আশায় এখানে বিনিয়োগ করছেন অনেক গ্রাহক। চোখে-মুখে স্বপ্নের জাল বুনলেও শেষে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
তেমনি ভোগান্তির শিকার হওয়া এমন কয়েকজন গ্রাহক জানান, ‘গোল্ড মেম্বারশিপ’ কেনার জন্য এক মাস আগে ২২ হাজার টাকা করে পেমেন্ট করেন তারা। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের আইডি এখনও অ্যাকটিভ হয়নি । এ বিষয়ে তাদের সাথে জায়গায় যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। এভাবে মেম্বারশিপের নামে শত শত গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রিং আইডি।
শুধু জবস মেম্বারশিপ দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। মেম্বারশিপ দিয়েও নানা ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। এমন একটি সিস্টেম হলো ‘ক্যাশ আউট’। নিজের জমানো টাকা উঠাতে পারছেন না গ্রাহকরা। বিভিন্নভাবে এজেন্টের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
জানা যায়, রিং আইডি ‘কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপ’ চালু করে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে। মেম্বারশিপের মাধ্যমে এখানে বিনিয়োগ করে টাকা আয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। এজন্য বর্তমানে দুটি প্যাকেজ অফার রয়েছে। সিলভার মেম্বারশিপ ও গোল্ড মেম্বারশিপ। সিলভার মেম্বারশিপের মূল্য ১২ হাজার টাকা এবং গোল্ড মেম্বারশিপের মূল্য ২২ হাজার টাকা। পাশাপাশি এখানে আরও দুটি প্রবাসী প্যাকেজ রয়েছে। ‘প্রবাসী গোল্ড’ ২৫ হাজার টাকা এবং ‘প্রবাসী প্লাটিনাম’ ৫০ হাজার টাকা।
মেম্বারশিপ পাওয়ার পর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞাপন যত গ্রাহক দেখেন তত টাকা ইনকাম হয়। এভাবে রিং আইডি কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপের সিলভার প্যাকেজ থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা, গোল্ড মেম্বারশিপ থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া প্রবাসী গোল্ড মেম্বারশিপ থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা, প্রবাসী প্লাটিনাম প্যাকেজ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ আছে বলে অফার দেয় রিং আইডি।
এসব লোভনীয় অফার দেখেই সেখানে বিনিয়োগ করছে গ্রাহক। আর এভাবেই গ্রাহক হারাচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত পুঁজি।
রিং আইডির জবস মেম্বারশিপ থেকে বিকাশ, রকেট ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ দিন পরপর কমপক্ষে ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাবে বলে বলা হয়। আর এজেন্টদের মাধ্যমে পেমেন্ট রিকোয়েস্ট দিয়ে এক থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা পাওয়া যাবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু সপ্তাহপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তোলার সুযোগ দিলেও কয়েকদিন পর রিং আইডি তা কমিয়ে দেয়। একসময় তারা ক্যাশ আউট অপশনই বাতিল করে দেয়। পরে তাদের অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যেই অনলাইন শপে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তাদের অনলাইন শপে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজেন্ট পেমেন্ট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক।
এভাবেই গ্রাহকের কাছ থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রিং আইডি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম রিং আইডি। যা কানাডার মন্ট্রিয়াল সিটিতে অবস্থিত ‘রিং ইনকরপোরেশন’ থেকে পরিচালিত। এর আইডি ব্যবহারকারীরা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। এ প্লাটফর্মে বিনামূল্যে কল, মেসেজ, স্টিকার, গোপন চ্যাট (সিক্রেট চ্যাট) করার সুযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে প্রাথমিক সংস্করণ সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট- www.ringid.com
এটির প্রতিষ্ঠাতা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিন ইসলাম ও শরিফ ইসলাম। এটি বাংলাদেশি কোম্পানি বলে দাবি করা হলেও প্রতিষ্ঠাতারা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানা গেছে।
দেশের বাইরে থাকায় রিং আইডিতে বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি দেওয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগে মূল্য না দিয়ে পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। বলা হয়েছে, ঢাকার ভেতরে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে দেশে প্রায় সাত হাজারের মতো অনলাইন শপ রয়েছে। কিন্তু এ সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা নেই। নামসর্বস্ব নীতিমালা দিয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন কোম্পানি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। অনিয়ন্ত্রিত এসব ই-কমার্সের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। কারণ, তাদের গ্রেপ্তার বা জেলহাজতে পাঠানো হলেও গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সান নিউজ/এনএএম