নিজস্ব প্রতিবেদক: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে রাসেলের মোহাম্মদপুরের নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের বাসায় (হাউজ ৫/৫এ, স্যার সৈয়দ রোড) অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাবের দায়িত্বশীল সূত্র।
এর আগে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক অনিন্দ তালুকদার। তিনি বলেন, আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার নম্বর- ১৯।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আরিফ বাকের গত ২৯ মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে ইভ্যালিতে মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেন। এগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি। ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সমাধান পাওয়া যায়নি। অফিসে গিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে খারাপ ব্যবহার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাসেলের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। তার সঙ্গে ইভ্যালি চরম দুর্ব্যবহার করেছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আরিফ বাকের বলেন, দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে থানা থেকে জানানো হয় আমার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি হয়েছে। তবে মামলার কপি আমি এখনো হাতে পাইনি।
এদিকে গত মঙ্গলবার ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। এদিন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, যেহেতু আইন লঙ্ঘন হয়েছে, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব না নিয়ে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেবে। তার আগে কমিটির সুপারিশ বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবকে জানানো হবে।
১৪ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপে যাওয়ার সুপারিশ করে ই-কমার্স বিষয়ক জাতীয় কমিটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান।
পরে তিনি ব্রিফিংয়ে বলেন, ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর সময় নিতে চায় না। এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিবে। তবে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করবে কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে জানাবে।
সর্বসম্মত পর্যালোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মো. হাফিজুর রহমান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ব্যবসাবিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলমসহ এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ই-ক্যাব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ইভ্যালিসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে আলাদা নিরীক্ষা করার সুপারিশ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে ইভ্যালি ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদীনের প্রদীপ, কিউকম, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিউ ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্ট।
হাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ইভ্যালি ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপে গেলেও পরবর্তীতে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, বুমবুম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউ কম, আদিয়ান মার্ট, নেট ডটকম এবং আলিশা মার্টের একই পদক্ষেপে যাবে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স সংক্রান্ত কমিটি মতামত দিয়ে বলেছে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগের এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে সব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বা ব্যবসায়িক লাইসেন্স নেয়নি।
সাননিউজ/ জেআই