নিজস্ব প্রতিবেদক: আঙুল ফুলে কলাগাছ আর ই-কমার্স ব্যবসা এখন প্রায় সমার্থক শব্দে পরিণত হচ্ছে। দেশে একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অসঙ্গতি উঠে আসছে গণমাধ্যমে। ইতোপূর্বে ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও নানা কেলেঙ্কাতে দেশ সরব হলেও এখন নতুন করে সামনে আসছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’ এর নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮০৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি বলছে, ‘ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড’ এর নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অবৈধভাবে ‘ধামাকা শপিং’ এর ই-কমার্স চলছিলো। বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও সিগনেচার কার্ড বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৮০০ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিনটি ব্যাংক হিসাবে এসব টাকা জমা হয়েছে। প্রায় দুই মাসের অনুসন্ধান শেষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী থানায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের এমডিসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর-১৬।
আসামিরা হলেন, ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের এমডি জসিম উদ্দিন চিশতী, তার স্ত্রী সাইদা রোকসানা খানম, দুই ছেলে তাশফির রিদওয়ান চিশতী ও মাসফিক রিদওয়ান চিশতী, ভাই নাজিম উদ্দিন আসিফ এবং ইনভেরিয়েন্টের পরিচালক (অপারেশন) সাফওয়ান আহমেদ। সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার, টেলিকম সিস্টেম, স্মার্টফোন, আইপি ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং কমিউনিকেশন আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করে আসছিল ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম। গত বছরের অক্টোবরে ‘ধামাকা শপিং’ নামে অবৈধ ই-কমার্স ব্যবসা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর মহাখালীর একোয়া টাওয়ারে ধামাকা শপিংয়ের নামে সাইট কিংবা অ্যাপসে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক স্বল্পমূল্যে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, মোবাইলফোনসহ নানা পণ্যের প্রলোভন দেখিয়ে তিন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৮০৩ কোটি ৫১ লাখ ৯১ হাজার ৩৬৩ টাকা নেওয়া হয়েছে। শুরুতে কিছু গ্রাহককে পণ্য দিয়ে আরও অনেককে আকৃষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি। এদের কেনা পণ্য সরবরাহ না করে প্রতারণা করেছে।
এ ছাড়া প্রায় ৬০০ সরবরাহকারীর অন্তত ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিয়েও কোনো মূল্য পরিশোধ করেনি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা ৮৯ কোটি টাকা লন্ডারের তথ্য পাওয়ার পরই ধামাকার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। লন্ডারকৃত টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮০০ কোটির বেশি টাকা আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। তবে তারা এখন কে, কোথায় আছে তা আমরা জানি না। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রাহকদের টাকা তিনটি ব্যাংক ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা নেয়া হয়। এরপর ওইসব টাকা ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজি, মাইক্রো ট্রেড এবং মাইক্রো ট্রেড ফুড ও বেভারেজের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়।
সান নিউজ/এফএআর