নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবিত্র ঈদুল ফিতর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আর এই উৎসবের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশের প্রায় সকল প্রকার ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতাদের কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়দের দাবি, গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে কেনাকাটা কমেছে অন্তত ৫৬ হাজার কোটি টাকার।
অদৃশ্য করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আরেকটি সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখের সময় বন্ধ থাকার পর এই ঈদ উৎসবেও বন্ধ ছিল দেশের বেশিরভাগ শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট।
ফলে যে ঈদ ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি বাজার ও দেশের অর্থনীতি চাঙা করতো এবার তার প্রায় কিছুই নেই। বন্ধ শপিংমল, দোকানপাটগুলোর দিকে চেয়ে এবার শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন সেই ব্যবসায়ীরা- অন্যান্যবার একই জায়গায় বেচাকেনায় যাদের দম ফেলার অবকাশ থাকতো না। যারা খুলতে পেরেছেন হতাশ তারাও।
করোনা ঝুঁকি নিয়েও সরকারের বিশেষ অনুমতিতে গত ১০ মে থেকে সারাদেশে যেসব শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট খুলেছিল সেগুলোর প্রথম শর্ত ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে এবং বিকাল চারটার মধ্যেই দোকানপাট বন্ধ করতে হবে। ফলে বেঁধে দেওয়া সময় থাকায় এসব নিয়মের প্রায় কিছুই পূরণ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া ভিড় এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশ না মানার প্রবণতা। ফলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় খোলার পর সপ্তাহ না ঘুরতেই প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ জেলার এসব দোকানপাট। সব মিলিয়ে হতাশায় পুড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত বছর রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানগুলোতে বেচাকেনা হয়েছিল অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকা। এবারের ঈদে এই সামান্য সময়ে বেচাকেনা হয়েছে আনুমানিক ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত রমজানের ঈদের তুলনায় এবার অন্তত ৫৬ হাজার কোটি টাকা কম লেনদেন হয়েছে। তিনি বলেন, গত রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল, এবার সে ধরনের ব্যবসা একেবারেই হয়নি। এবার সব ধরনের ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ঈদের আগে সরকার দোকান, মার্কেট খুলে দেওয়ায় সারাদেশের ৫৬ লাখ ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কোনোমতে আত্মসম্মানটা বাঁচাতে পেরেছেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সরকারের এই উদ্যোগের কারণে ক্ষুদ্র এই সব ব্যবসায়ীকে কারও কাছে হাত পাততে হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধর্মীয় রীতি আর সমাজবদ্ধ জীবনের অভ্যাসগত কারণেই ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা মুসলিম সমাজে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। পরম্পরায় চলে আসা এই রেওয়াজের কারণে প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয়-জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে কেনাকাটা করতো সাধারণ মানুষ। ১৫ রোজার পর এই কেনাকাটার মাত্রা বেড়ে যেত বহুগুণ।
আগের বছরগুলোয় ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসতো ততোই নগরীর মার্কেটগুলোয় ভিড় বাড়তো। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের ধারণা, গত বছর পর্যন্ত ঈদের অর্থনীতির আকার ছিল প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু, করোনার কারণে এবছর ঈদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
অর্থনীতিদিরা বলছেন, অন্যান্য বছর ঈদ উপলক্ষে অর্থের বড় একটা জোগান আসতো সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, গতিশীল অভ্যন্তরীণ বাজার, জাকাত ও ফিতরা থেকে। এ ছাড়াও অন্যতম একটি উৎস ছিল প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ (রেমিট্যান্স)-যা চাঙ্গা করতো গ্রামীণ অর্থনীতি। তবে এবছর বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বোনাস দিতে পারেনি, অনেক প্রতিষ্ঠান দিয়েছে অর্ধেক। বেতন বকেয়া রেখেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাস হলেও অনেকে কেনাকাটা করতে পারেননি। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় নিত্য দরকারি খাদ্যপণ্য জোগাড়েই ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে তাদের। কেনাকাটার চিন্তাও করতে পারেনি তারা।
দরিদ্র ও দুস্থরা তো পুরোপুরি সরকারি বেসরকারি ত্রাণ ও সহায়তার ওপরে এখনও নির্ভরশীল। মার্কেটে সামনে কেনাকাটা নয়, সাহায্য পাওয়ার আশায় ভিড় জমিয়েছিল তারা।
সান নিউজ/ আরএইচ