নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পেতে ২৯ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঘুষ দিতে হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এই ঘুষ দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও ৪৭ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঘুষ দাবির বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না কোনো জবাব দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানগুলোও ঘুষের শিকার হয়ে থাকতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (২৮ আগস্ট) সংস্থার এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ৫০১টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গত জুলাই মাসে জরিপটি পরিচালনা করে সানেম।
সংবাদ সম্মেলনে জরিপের প্রক্রিয়া ও ফল তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, জরিপে নেয়া ২৯ শতাংশ উদ্যোক্তা কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন। ৪৭ শতাংশ হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বলেননি। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হিসেবে নিলে এরাও ঘুষের শিকার বলে ধরে নেয়া যায়। তারা হয়তো নানান দিক থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই সরাসরি হ্যাঁ বলতে চাননি। আর মাত্র ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়নি।
শিল্প কিংবা সেবা প্রতিষ্ঠানের ধরন ব্যাখ্যা করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ঘুষের অভিযোগ তোলা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষুদ্র-মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। মোট ৪২ শতাংশ এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র আকারের প্রতিষ্ঠান।
ঘুষের দাবিসহ একরম বিভিন্ন কারণে জরিপে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জুলাই পর্যন্ত ৭৯ শতাংশ প্রণোদন প্যাকেজের বাইরে রয়ে গেছে। অর্থাৎ মাত্র ২১ শতাংশ প্যাকেজ থেকে ঋণ সুবিধা পেয়েছে।
তবে ব্যাংক কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ দাবি করা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি সানেমের পক্ষ থেকে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ঘুষ দাবি করা হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের হ্যাঁ কিংবা না জবাবের বাইরে বিস্তারিত আর কিছু জানতে চাওয়া হয়নি জরিপে।
করোনার অভিঘাত থেকে অর্থনীতি সুরক্ষায় ঋণ আকারে কয়েক দফায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ রয়েছে।
পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন তহবিলে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রিশিপমেন্ট ঋণে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে প্যাকেজে। ব্যাংকের মাধ্যমে সহনীয় সুদে ঋণ আকারে এই প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হারে ঋণের সুদে ভর্তুকি পরিশোধ করছে সরকার।
সান নিউজ/এফএআর