নিজস্ব প্রতিবেদক: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে একটি নিষ্ফলা বৈঠক হয়েছে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। বৈঠকের পর বিশেষ বার্তা নেই। বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের কথাতেও তা স্পষ্ট।
বাণিজ্যসচিব সাংবাদিকদের জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। ওইভাবে সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। তাঁরাও আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একদিকে ছিলেন মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপসহ নিত্যপণ্যের আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীরা। অন্যদিকে ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সদস্য আবু রায়হান আল বেরুনী, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে বিটিটিসির পক্ষ থেকে ভোজ্যতেল ও চিনির চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার দর, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, ধনে ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ও স্থানীয় বাজারদর ও চালের স্থানীয় বাজারদর নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যসচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এ সময় অন্যরা উপস্থিত থাকলেও কথা বলেননি।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিফলন হিসেবে এগুলোর দাম বেড়েছে। তার বেশি যাতে না বাড়ে, ব্যবসায়ীরা সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্য পণ্যগুলোর দাম অবশ্য ঠিক আছে।
বাণিজ্যসচিব জানান, পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই। যেহেতু অনেক পণ্য আমদানিনির্ভর, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধির কথা বলে যাতে স্থানীয়ভাবে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুত করা না করা হয়, ব্যবসায়ীদের সেটা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যতটুকু বাড়বে, সে অনুযায়ী হিসাব করে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম যতটা বাড়ানো উচিত, সেটাই তাঁরা করবেন।
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, এটা ঠিক যে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে অনেক কার্যকারণ (ফ্যাক্টর) কাজ করে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম এক বছরে আড়াই গুণ বেড়েছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, চিনির খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে আলোচনা হয়েছে। আর ভোজ্যতেলের দাম আগে যেটা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটাই থাকবে। শোকের মাস বিবেচনায় এ মাসে নতুন করে দাম বাড়ার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও তা পরে বিবেচনা করা হবে।
ভোজ্যতেলের পরিশোধনকারী কারখানাগুলোর সমিতি গত মে আসে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, পাম সুপার তেল ১১২ টাকা ও ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৭২৮ টাকা দর নির্ধারণ করেছিল। সেই দরেই বেচাকেনা হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে চিনির দাম এখন কেজি ৮০ টাকা। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় বিটিটিসির পর্যবেক্ষণ হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম ও চিনির মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পণ্য পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির এই প্রবণতা যেন ব্যবসায়ীরা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আরও বলা হয়েছে, তদারক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।
করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও এত বড় বৈঠক করার ফল কী, জনগণের জন্য বার্তাই বা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি জানার চেষ্টা ও তদারকিব্যবস্থা জোরদার করছি।
সান নিউজ/এফএআর