নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে বাংলাদেশের রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে এই মাইলফলক অতিক্রম করল বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিষয়টি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে ৪৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের এসডিআর বরাদ্দ যোগ হওয়ায় দিন শেষে রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শুন্য ৪ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ লাখ ৯ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ১৫ পয়সা ধরা হয়েছে। এই অর্থে বাংলাদেশের ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এ বছরের ৩ মে দেশের রিজার্ভ প্রথমবার ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ওইদিন রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫.১০ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার ছাড়ায়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ বিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ডিসেম্বরে ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়ল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম বার্ষিক রিপোর্ট ১৯৭১-১৯৭৩ এর অষ্টম পৃষ্ঠায় বলা হয়, ‘স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরপর বাংলাদেশের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ছিল না। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করে নিয়েছে। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ১৯৭৩ সালের ২৯ জুন এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।’
৪০ বছর আগে ১৯৮১-৮২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বনিম্ন ১২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা এক মাসের আমদানি ব্যয়ের চেয়েও কম ছিল।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০০ কোটি (এক বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে তা দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর তা বেড়ে তিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের শেষে তা কমে ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে আরও কমে ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষের দিকে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন কমে এসে এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করে।
রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নামলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে— এমন আশঙ্কায় ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ইরান ও মালদ্বীপ- এই ৯ দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করে। আকুর বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ কিছুটা কমে যায়।
সাননিউজ/এমআর